মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দালাল-বেঈমানের জন্মদাতা কুখ্যাত ইব্রাহিমকে পাহাড়ি জনগণ কখনই ক্ষমা করবে না! টেকনাফে আদালতের আদেশ অমান্য করে জমি দখলের চেষ্টা খাগড়াছড়িতে অটোরিকশা চালকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার থানচি বাজার সড়কের বেহাল দশা, জনদুর্ভোগ চরমে ফিলিস্তিন সংকট:বেসামরিক নাগরিকদের গাজা ত্যাগের জন্য সময় নির্ধারণ করাই ইসরাইলের উদ্দেশ্য কুতুবদিয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা ইসরায়েল থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করলো তুরস্ক মাস্ক পরে অনুশীলনে বাংলাদেশ, দিল্লিতে ম্যাচ নিয়েও শঙ্কা গর্জনিয়ায় পানিতে ডুবে হেফজখানার ছাত্রের মৃত্যু পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের রানের পাহাড়

অঢেল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন পুলিশ কর্মকর্তা, প্রতারণার শিকার শ্যালক-শ্যালিকা!

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০২২
  • ৩৫ পঠিত

জমি-ফ্ল্যাট কেনার নাম করে স্ত্রীর ছোট ভাই ও বোনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরেুদ্ধে। শুধু তাই নয়, পার্বত্য অঞ্চল খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি এলাকায় একই পাহাড় দুই জনের কাছে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করারও অভিযোগ উঠেছে। উপপরিদর্শক (এসআই) থেকে পদোন্নতি পেয়ে পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হওয়া এই কর্মকর্তার ঘুষ-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করছে পুলিশ সদর দফতর। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন। শিগগিরই তিনি বরখাস্ত হতে পারেন বলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের

অভিযুক্ত ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এনামুল হক শোভা। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ ইউনিট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-৭ এ সিলেটের লালবাজার এলাকায় এএসপি হিসেবে কর্মরত আছেন। এএসপি এনামুলের বিরুদ্ধে আইজিপি কমপ্লেইন সেলে এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ দেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তাজুল ইসলাম মামুন ও তার বোন মর্জিনা বেগম। অভিযোগ তদন্ত শেষে ২০ জুলাই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারী মর্জিনা আক্তার ও মামুন এই এএসপির স্ত্রীর ছোট বোন ও ভাই। তাদের জায়গা জমি, প্লট, ফ্ল্যাট, দোকান, নগদ টাকা ও ডলার এনামুল আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন এই দুই জন।

একই পাহাড় দুই বার বিক্রি :
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি থানায় এসআই পদে কর্মরত ছিলেন ছিলেন এনামুল হক শোভা। এসময় আমেরিকা প্রবাসী শ্যালক তাজুল ইসলাম মামুনকে এনামুল হক জানান, মানিকছড়িতে একটি জায়গা বিক্রি হবে। মামুন সেখানে গিয়ে দেখেন সেটি একটি পাহাড়। মামুন তাকে জানান, পাহাড় বিক্রি করা আইনত নিষিদ্ধ। কীভাবে পাহাড় বিক্রি করবেন? এনামুল হক তখন মামুনকে বলেন, ‘তুমি টাকা দাও, আমি বাকিটা দেখবো। আমি পুলিশের লোক। আমার দ্বারা সবই সম্ভব। তোমার লাভ পেলেই তো হলো।’

এরপর মামুন আট লাখ টাকা দেন এনামুলকে। মামুন জানান, এনামুল সেই একই পাহাড় ২০২০ সালে অপর এক ব্যক্তির কাছে ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। তবে মামুনকে তার আট লাখ টাকা ফেরত দেননি। টাকা দিয়েও পাহাড় না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে মামুন পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

এএসপি এনামুল হকের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এখলাসপুর এলাকায়। অভিযোগকারীরা জানান, পুলিশে চাকরি নেওয়ার পর থেকে ঢাকা, নোয়াখালী, সিলেট ও বান্দরবানে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন এনামুল। ঢাকায় প্লট, ফ্ল্যাট, নোয়াখালীতে একাধিক বাড়ি, বান্দরবানে পাহাড় ও বাগান রয়েছে তার।

জালিয়াতি করে স্বজনদের জমি আত্মসাৎ:
এনামুল হকের শ্যালিকা মর্জিনা আক্তার ঢাকার খিলগাঁওয়ে বসবাস করেন। ভাই মামুনের সঙ্গে মিলেও তিনিও পুলিশ সদর দফতরে আইজিপি’র কমপ্লেইন সেলে অভিযোগ করেছেন এনামুলের বিরুদ্ধে। তারা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, এএসপি এনামুল হক তাদের বড়বোনের স্বামী। তাকে তারা অভিভাবক হিসেবে সম্মানের চোখে দেখেন। কিন্তু এনামুল হক সেই সুযোগ নিয়ে তাদের জায়গা-জমি, টাকা-পায়সা আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে অনিয়ম করে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

মর্জিনা আক্তার ও তার ভাই অভিযোগে উল্লেখ করেন, এনামুল হক ২০০৬ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদী হাউজিং লিমিটেডের একটি প্লট যৌথভাবে কেনার জন্য তাদের অনুরোধ করেন। মামুন ও মর্জিনা তার প্রস্তাবে রাজি হন। পরে তাকে বিশ্বাস করে এককালীন তারা দুই জন ২০ লাখ টাকা দেন। পরবর্তীতে জমির কথা জিজ্ঞেস করলে এনামুল জানায়, কোম্পানি দলিল দিচ্ছে না। কোম্পানির জমি কেনার টাকার রশিদ দেখতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন। এভাবে ২০২০ সাল পর্যন্ত নানা টালবাহানা করায় তাদের সন্দেহ হয়। পরে তারা মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রিকৃত ৬২৬৬ নম্বর দলিলের মাধ্যমে এনামুল হক তিন জনের বদলে তার নিজের নামে ওই জমি লিখে নেন।

তাজুল ইসলাম মামুনের জন্য ২০০৮ সালে খিলগাঁওয়ের চৌধুরীপাড়ার খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকার সি-ব্লকের ৩৮৩/৩৮৪ নম্বর প্লট দুটি এনামুল বুকিং দেন। এর কিস্তি বাবদ মোট ৫৬ লাখ টাকা এবং জরিমানা ও সার্ভিস চার্জ বাবদ সাত লাখ টাকাসহ মোট ৬৩ লাখ টাকা এনামুলের হাতে দেন মামুন। কিন্তু এখানেও প্রতারণার আশ্রয় নেন এনামুল হক। মামুনকে ১০৫০ বর্গফুটের ডি-৪০৪ নম্বর এপার্টমেন্টটি বুঝিয়ে দেন এনামুল। অন্য একটি ফ্ল্যাট এনামুল নিজের নামে করিয়ে নেন। মামুন কিস্তি পরিশোধ করার পরও ওই ফ্ল্যাটটি বুঝে না পাওয়ার ব্যাপারে এনামুলকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, কোম্পানি ফ্ল্যাট দিয়ে দেবে। তিনি পুলিশ অফিসার হওয়ায় ওই ফ্ল্যাটটিও দেবে। কিন্তু এখনও বাকি ফ্ল্যাটটি বুঝিয়ে দেননি বা তার পরিশোধ করা টাকাও ফেরত দেননি এই কর্মকর্তা।

মামুনের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় একটি দোকান দেবেন বলে তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেন এনামুল হক। আজও সেই দোকানের কোনও পজিশন বা দলিল মামুনকে দেননি। এছাড়াও ঢাকার রামপুরার মেরুল বাড্ডা এলাকায় চারটি দোকান কিনে দেওয়ার কথা বলে কিস্তিবাবদ ১২ লাখ টাকা এনামুল নেন। দোকানের দলিলপত্র বুঝিয়ে না দেওয়ায় এবং নানা টালবাহানা করায় গোপনে মামুন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সেখানে মার্কেট বা দোকানের কোনও অস্তিত্বও নেই। মূলত ওই জায়গাটি ছিলও সরকারি খাস জমি।

সিলেটে কর্মস্থল হওয়ায় সেখানে কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে দাবি করে এনামুল চা বাগান কিনে দেওয়ার প্রস্তাব দেন মামুনকে। এভাবে মামুনের কাছ থেকে ২০ হাজার ডলার নিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেন। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র মামুনের কাছে আছে।

সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে:
এনামুল হকের পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করেন। সেখানে টিউশন ফি, থাকা খাওয়ার সব খরচ এনামুল হক বহন করেন বলেও দাবি করেন মর্জিনা ও মামুন। এনামুল হক নিজেও একাধিকবার স্বপরিবারে আমেরিকা সফর করেছেন বলে তারা জানান। দুই ছেলের বিদেশে লেখাপড়ার খরচের বিষয়টি এনামুল হক নিজেই গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন।

নোয়াখালীতে একাধিক বাড়ি, ঢাকায় প্লট, ফ্ল্যাট:
নোয়াখালীতে বাবার বাড়ির বাইরেও সুসজ্জিত বাড়ি করেছেন এনামুল হক। তবে পরিবার সেখানে থাকেন না। ঢাকায় ফার্মগেট আলরাজী হাসপাতালের পাশের একটি ভবনে ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরের মোহাম্মাদীয়া হাউজিংয়ে বাড়ি, বসিলাতে প্লটের তথ্য পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত এনামুল হকের বক্তব্য:
এনামুল হকের কাছে এসব বিষয় জানতে চেয়ে শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

এনামুল হক বলেন, ‘বান্দরবানে বর্তমানে আমার নামে কোনও পাহাড় নেই। এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। যারা অভিযোগ করেছে, আমি তাদের আমেরিকা পাঠিয়েছি, মানুষ করেছি। তারাই এখন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়।’

এনামুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত বিষয়ে সিলেটের আর্মড পুলিশ-৭ এর সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (টু-আইসি) দোলন মিয়া তদন্ত করেন। এ বছরের ২০ জুলাই পুলিশ সদর দফতরে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তদন্তে বেশকিছু অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

এ বিষয়ে এপিবিএন-৭ এর অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে যোগদান করেছি মাত্র একমাস। ঘটনাটি তার আগের। আমি বিষয় আসলে কিছুই জানি না।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Let's check your brain 94 − 85 =

একই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved 2022 CHT 360 degree