শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০২:০৯ অপরাহ্ন

অ্যামাজনের মাহফুজ রাসেল এখন খাগড়াছড়ির বনে

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০২২
  • ২৩ পঠিত

পড়াশোনা শেষে বসবাস করতেন ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। সেখান থেকে অ্যামাজন বনে গিয়ে মাহফুজ আহমেদ রাসেল থেকেছেন ওখানকার বাসিন্দারের সাথে। অবশেষে এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির গহীন বনে।

গত ছয় বছরে খাগড়াছড়ির, মাটিরাঙ্গার পূর্ব খেদাছড়া এলাকায় গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সংরক্ষিত বনাঞ্চল। যেখানে নিজের জায়গায় নিজেই থাকেন উদ্বাস্তুর মতো। আর পুরো ২৩ একর জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন বন্যপ্রাণীদের জন্য।

কেন তিনি এমনটি করলেন? কী কারণে তিনি ইংল্যান্ডে নিজের ক্যারিয়ার ছেড়ে জঙ্গলে এসে থাকাটা বেছে নিলেন?

এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গার পূব খেদাছড়া এলাকার আশেপাশের বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদকে টিকিয়ে রাখা এবং সংরক্ষেণের চেষ্টা করছি। এটা আমি শুরু করেছি ৬ বছর আগে থেকে। শুরুটা করেছিলাম আমি যখন ম্যানচেস্টার থেকে পূর্ব খেদাছড়ার অর্জুনটিলায় আসি। শহরে থাকতে না পারার কারণে আমি এখানে আসি। এজন্য আমি পাহাড়ে একটি ছোট জায়গা নিয়ে থাকা শুরু করি। আমি অ্যামাজনের ভিতরে ছিলাম অনেক দিন। ওখানকার বাসিন্দাদের সাথে লম্বা সময় ধরে ছিলাম। যারা শতভাগ প্রকৃতি নির্ভরশীল তারা কতটুকু সুখে আছে.. ওই জিনিসটা আমার জানার খুব আগ্রহ ছিলো। ওটা জানতে আমি অ্যামাজন জঙ্গলে চলে যাই। আমি যখন এখানে আসি তখন এতোটা গাছপালা ছিলো না। অনেক কম ছিলো। যখন শীত কাল আসে তখন শিকারিরা বন্য প্রাণী সব শিকার করে নিয়ে যায়। তখন আমি বুঝিয়ে বুঝিয়ে গত ৬ বছরে এই অঞ্চলে ৫০ ভাগ শিকার কমিয়েছি।

তিনি বলেন, শিকার কমিয়ে লাভটা কি হলো? আগে বন ছিলো ওখানে বন্যপ্রাণী গুলোর শিকার পাওয়ার সুযোগ ছিলো। এখন যেহেতু থাকার জায়গা কমে গেছে ওরা ছোট জায়গায় আটকে পড়েছে। জায়গা ছোট হয়ে আসার কারণে ওদের খাবাররের সংকট হয়ে আসছে। তাই ভাবলাম আমি যদি বনটা না বাঁচাই, তাহলে এই বন্যপ্রাণী বাঁচিয়ে লাভ কী? বন না বাঁচালে তো তারা এমনিতেই মারা যাবে। সেখান থেকেই আমার এই বন বাঁচানোর উদ্যোগ, যে ওই বনই বাঁচাতে হবে।

মাহফুজ রাসেল বলেন, ছোট গাছ, ঘাসফুল ওগুলো আমরা কেটে দিচ্ছি। এই উদ্ভিদ না হলে পোকাগুলো হচ্ছে না। ফলে বন্য প্রাণী কমে যাচ্ছে। কারণ খাদ্য নেই ওরা থাকবে কীভাবে? তাহলে ইকো-সিস্টেম বাঁচাতে গেলে আমাদের ছোট উদ্ভিদ থেকে শুরু করে বড় গাছ সবই বাঁচাতে হবে। এখানে থেকে একটা হারালে বুঝতে হবে এর প্রভাবটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পড়বে। বন সংরক্ষণের জন্য গত ছয় বছরে আমি এখানে ২৩ একর জায়গা নিয়েছি। যখন এটা আমি এই জায়গা নিয় তখন একটা টিলা ছাড়া বাকি সব টিলায় একদম কিছুই ছিলো না, সব ন্যাড়া ছিলো। এখন অনেক গাছপালা জন্মেছে এখানে। ফলে ওদের বেঁচে থাকার জন্য যে খাবার সেটাও এই বনে এখন আছে। আগে শজারু দেখা যেতে না এখন শজারু ফিরে আসতেছে। সম্প্রতি একটা হলুদ কাছিম পেয়েছি, এবং খুব অবাক হয়েছে, ভেবেছিলাম, এটা আর নাই এখানে। আমি সেটা দেখি। এই এলাকায় আমি বন শুধু বাড়তে দিয়েছি ফলে এখানে শুধু বনে পরিণত হয়েছে। যারা বসতি করে থাকেন তাদের বলবো না আমি বনের বড় চ্যালেঞ্জ । সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যারা বাইরে থেকে এসে, মোট দাগে জায়গা কিনে এবং সেগুলোকে পুরোপুরি বন ধসে দিয়ে এক জাতে গাছের বাগান করে।

স্থানীয় কাঞ্চন মালা ত্রিপুরা নামের এক নারী বলেন, আগে শুকর , হরিণ আগে অনেক ছিলো, তাদের শিকার করে খেয়ে ফেলে। দেখতে পেলে মেরে ফেলে। আমার এখন মনে হচ্ছে জিনিসটা একদম ঠিক হয়নি। আগে প্রচুর ছিলো ওরা মেরে ফেলার কারণে এখনতো দিনে দিনে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

যোগ্য মোহন ত্রিপুরা নামের এক দিনমুজুর বলেন, ‌এখন নাতিপুতিদের সবাইকে কোন একটা পাখিও শিকার করতে মানা করি।

সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Let's check your brain 19 − = 17

একই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved 2022 CHT 360 degree