কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ঈদগাঁওতে বন বিভাগের গোচরেই গড়ে উঠেছে চোরাই বনজ কাঠের অবৈধ ডিপো। সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে চোরাইকৃত মূল্যবান এসব গাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এসব ডিপোতে। ফলে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ । বন বিভাগের এক শ্রেনির কর্মকর্তারা মাসোহারায় কাঠচোরদের এ অপকর্ম অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদগাঁও বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে তেলীপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে সাইনবোর্ড দিয়ে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ। যাতে রয়েছে গর্জন, আকাশমনি, মেহগনি, চাপালিশ ও আরো হরেক রকম গাছ ও চারাগাছ ।
ক্রেতা সেজে জিজ্ঞেস করলে ডিপো মালিক জানায় ঈদগাঁও, কালিরছড়া ঈদগড়, ভোমরিয়াঘোনা, রাজঘাট, ফুলছড়ি বন এলাকা থেকে রাতের আঁধারে এসব কাঠ বনসম্পদ ধ্বংসকারী চক্র সংশ্লিষ্ট বন বিভাগকে ম্যানেজ করে তাদের কাছে পৌঁছে দেন।
তদ্রুপ বাজারের উত্তর পাশে বাঁশঘাটা ব্রিজ সংলগ্ন ঈদগাঁও নদীর চরে গিয়ে দেখা যায়, বনজ চোরাই গাছের বিশাল স্টক। বিক্রেতারা জানান, বন বিভাগের কমকর্তাদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে এ অবৈধ বনসম্পদ “গাছের ব্যবসা” করে আসছেন তারা।
এ ছাড়াও বাজারের মূল পয়েন্টে পাইপ বাজার, কেন্দ্রীয় কালিবাড়ি সংলগ্ন এলাকা ও ভূমি অফিস সংলগ্ন উত্তর পাশেও গড়ে উঠেছে চোরাই বনজ কাঠের বিশাল স্টক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা জানান, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়মিত মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিয়ে তারা অবৈধ গাছের ব্যবসা চালু রেখেছেন।
ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ফকিরাবাজারেও চোরাই বনজ গাছের একাধিক ডিপো গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ডিপো থেকে রাতের আঁধারে জেলার বিভিন্ন এলাকায় কাঠ পাচার করা হচ্ছে।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন ঈদগাঁও রেঞ্জ কমকর্তা আনোয়ার হোছাইন খান যোগদানের পর থেকে ঈদগাঁও উপজেলাব্যাপী বন উজাড় ও কাঠ পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, তিনি এসব অবৈধ কাঠের ডিপোর বিষয়ে জানেননা। পরিবেশপ্রেমিক ও সাধারণ জনগণের প্রশ্ন, ঈদগাঁও বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রকাশ্যে মাসের পর মাস এসব অবৈধ কাঠের ডিপো থাকলেও তিনি জানেননা এ উত্তরে জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। তারা একে “রক্ষক রূপি ভক্ষক” এর ভুমিকা হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
ভোমরিয়াঘোনা বিট কর্মকর্তা এম ইউ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে, এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে প্রতিবেদককে অফিসে সাক্ষাতের অনুরোধ জানান।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কমকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বিষয়টি তিনি দেখছেন বলে জানান।
বন বিভাগের রক্ষক রূপি ভক্ষকের ভূমিকায় থাকা এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা না নিলে সামাজিক ও সংরক্ষিত বনের অবশিষ্টাংশও অতি অল্প সময়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।