টানা ৪ দিন বন্ধের পর এবার বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ির ৫২নং সীমান্ত পিলারের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটলো। যা ছিল ব্যতিক্রম। ৩৫ পিলার থেকে ৫৩ পিলার সীমান্তে গত পৌনে ৩ মাসের এই প্রথম ৫২নং পিলার এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর আগে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে তুমব্রু ও চাকঢালা পয়েন্টে।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) গোলাগুলির আওয়াজের পর আলোচনায় আসলো ২০১৭ সালে এ ৫২নং পিলার সন্নিকটে মর্টার শেলে নিহত নায়েক মিজান। স্থানীয় বাসিন্দার এমনটিই জানালেন এই প্রতিবেদককে।
স্থানীয় দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘হালনাগাদ ভোটার কর্যক্রমে সারা দিন ব্যস্ত থাকলেও তিনি গোলাগুলির বিষয়ে খোঁজখবর রেখেছেন। এ পয়েন্টে এই প্রথম গোলাগুলির আওয়াজ মানুষ শুনেছেন। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোন দুঃসংবাদ নেই।’
পাইনছড়ি একাধিক বাসিন্দা জানান, মিয়ানমার বিদ্রোহীদের গোলাগুলিতে সীমান্তের অন্যান্য স্থানে মানুষের মাঝে আতঙ্কে থাকলেও তারা ছিল না। আর তাও ৪ দিন বন্ধ ছিলো। অর্থাৎ গত রোববার থেকে বুধবার পযর্ন্ত টানা চারদিন কোন গোলাবারুদের বিস্ফোরণের আওয়াজ আসা একেবারেই বন্ধ ছিলো। কিন্ত ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা পযর্ন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি এবং আর্টিলারি মর্টারশেল বিস্ফোরণের আওয়াজে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের সীমান্তের মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন তারা। আর একই দিন রাত ৮টার পরেও কয়েকটি গোলাগুলির আওয়াজ তারা শুনেছেন বলে জানান।
সূত্র জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নিয়ন্ত্রণাধীন দৌছড়ি ইউনিয়নের লেবুছড়ির উপরে পাইনছড়ি সীমান্ত পিলার ৫২ ও ৫৩ মাঝ দিয়ে ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার থেকে তুমুল গোলাগুলির আওয়াজ শুনেছেন বাংলাদেশী লোকজন। যা মিয়ানমারের সামান্য ভিতরে তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে চলা সংঘর্ষের গোলাবারুদ ফোটাফুটির এই বিপদজনক শব্দে ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের।
তাদের অনেকেই বলেছেন, এই ৫২ পিলার এলাকা ছিল সেই ২০১৭ সালের স্মরণীয় ঘটনা স্পট। সে সময় সীমানা পিলারের খোঁজ নিতে গিয়ে মিয়ানমানের সীমান্ত রক্ষী নাসাকা বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বিজিবির নায়েক মিজান মারা গিয়েছিলো। আর তাকে ফেরৎ দিতে দেওয়ার কথা বলে তখনকার ৩১ বিজিবির ৭০ জন সদস্য ও ২ সাংবাদিকের উপর মর্টারশেলের হামলা করেছিলো নাসাকা বাহিনী।
এতে ২ সাংবাদিকসহ ৮ বিজিবি সদস্য নিখোঁজ হলেও পরে তারা পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। দুই সাংবাদিক হলেন, সাংবাদিক মাঈনুদ্দিন খালেদ ও তরুণ সাংবাদিক হাফিজ। আর ৫ বছর পর সেই ৫২ পিলার আবারো আলোচনায় আসাতে লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের স্মরণে পড়লো সে পুরোনো শোক স্মৃতির কথা। তবে অবশ্য নায়েক মিজানের লাশ ক’ দিন পরে নাসাকা বাহিনী ফেরৎ দিয়েছেলন।
এ সীমানায় বসবাসরত কৃষক মো. কামাল হোসেন জানান, তিনি বাগানে কাজ করতে যাওয়ার সময় মিয়ানমারের ওপার থেকে গোলাগুলির ব্যাপক শব্দ আসায় তিনি ভয়ে আর বাগানে জাননি।
জামছড়ির বাসিন্দা মো. আব্দু রহমান জানান, ভোরে তার ঘুম ভেঙ্গে যায় উল্লেখিত পিলার দিয়ে ব্যাপক গোলাবারুদ বিস্ফোরণের শব্দে।
তিনি আরো জানান, জামছড়ির ৪৫ সীমান্ত পিলারের মিয়ানমারের সামান্য ভিতরে মানুষের ব্যাপক গুঞ্জন শোনা যায়। সম্ভবত তারা স্বাধীনতাকামী আরকান আর্মি? এবং কয়েক ঘণ্টা পর পর ধোয়ার কুণ্ডলি দেখা যায়। যা সম্ভবত রান্না-বান্নার করার সময় এই ধোঁয়ার উৎপত্তি হয়।
এ ব্যাপারে দৌছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইমরান বলেন, ‘এ গোলাগুলি মিয়ানমারের সরকার ও বিদ্রোহীদের। এ নিয়ে নাইক্ষংছড়ির মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে ১১ বিজিবির একটি সূত্র জানান, বৃহস্পতিবারের ৫২ পিলারের ওপারের ঘটনা তারা জানেন না। আর ঘটে থাকলেও তা তাদের বিষয়। তবে বিজিবি সবসময় সর্তক আছে থাকবে।