খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্প্রসারিত ভবনের কেন্ডিলিবারের ছাদ ধসে নিহত দুই শ্রমিকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা ও আহতদের সু-চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষেদের চেয়ারম্যান মংস্ইুপ্রু চৌধুরী অপু। শনিবার (৮ অক্টোবর) রাতে তিনি এই বিষটি নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, শনিবার (৮ অক্টোবর) বিকাল পৌনে ৪টার দিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন সম্প্রসারিত ভবনের কেন্ডিলিবারের ছাদ ধসে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত ও অপর ৫ জন আহত হন। নিখোঁজ আরো অন্তত ৩ জন বলে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন সম্প্রসারিত ভবনের কেন্ডিলিবারের ছাদ ঢালাই চলাকালীন হঠাৎ ধসে পড়ে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত ৬ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে সাজ্জাদ হোসেন নামে একজন মারা যান। সে খাগড়াছড়ি পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে কলেজ গেট এলাকার মো.আমিনের ছেলে বলে জানা গেছে। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে আরো এক জনের লাশ উদ্ধার হয়।
খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিসের সহকারী স্টেশন ম্যানেজার রাজেশ বড়ুয়া জানান, দুর্ঘটনায় আরো কোনো শ্রমিক ছাদের নিচে চাপা পড়ে আছেন কিনা সেজন্য উদ্ধারকাজ চলছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, পরিষদের সম্প্রসারিত ভবনের সামনের অংশের ছাদ ঢালাইয়ে ২২ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, শনিবার বন্ধের দিন হওয়ায় ছাদ ঢালাইয়ের সময় ঘটনাস্থলে কোন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন না। ঢালাইয়ে লোহার খুটির পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ঠেস দেওয়া হয়েছিল। সেন্টারিং সিস্টেম ছিল ক্রটিপূর্ণ। ঘটনার পর জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমার নাম্বারে একাধিক বার কল দিলেও নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া গেছে। সহকারী প্রকৌশলী প্রশান্ত কুমার এবং জিকু চাকমার মোবাইলে কল দিলে তাদের নাম্বারও বন্ধ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা, জেলা পরিষদ মংসুইপ্রু চৌধুরীসহ জনপ্রতিনিধিরা।
উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্বদানকারী মেজর মো. রিয়াদুল ইসলাম জানান, আরো কয়েকজন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে। সবাইকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংঘটিত ঘটনাকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।
তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ নিহত দুই শ্রমিকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা, আহতদের সু-চিকিৎসা ও ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার রাজেশ বড়ুয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, ছাদটি নির্মাণের যে সেন্টারিং তৈরি করা হয়েছে সেটি দুর্বল ছিল। ঢালাই কাজ চলাকালীন বাঁশে সেন্টারিংটি ভার নিতে নিতে পারেনি। তাই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
খাগড়াছড়ি সেনা সদর জোনের উপ অধিনায়ক মেজর রিয়াদুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস মিলে আমরা নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধারে কাজ করছি। আমরা প্রাথমিকভাবে দেখছি ছাদের সেন্টারিংয়ের ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস পৌর মেয় নির্মলেন্দু চৌধুরী ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শানে আলম প্রমুখ।
এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান।