পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম কলেজ পড়ুয়া ছেলে মো. সাজ্জাদ হোসেনকে হারিয়ে শোকে বিহবল বাবা মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন মিস্ত্রী ও মা ছায়েরা খাতুন।কাউকে দেখলে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কোনো সান্ত্বনাই কান্না থামাতে পারছে না তাদের।
মো. সাজ্জাদ হোসেন (১৮) খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বাবা মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন মিস্ত্রী ও মা ছায়েরা খাতুন দুই জনের বহুমুখী রোগে আক্রান্ত। ছোট মেয়ে প্রতিবন্ধী। তবে বিয়ে হয়ে গেছে। পড়া-লেখার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে শ্রম দিতেন মো. সাজ্জাদ হোসেন । তার শ্রমের অর্থ দিয়ে চলতো মা ও বাবার ঔষধ, দুই মুঠো লবণ-ভাত ও ঘর ভাড়া।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস অসুস্থ মা ও বাবার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ যোগাতে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের কেন্ডিলিবারের ছাদ ঢালাইয়ের শ্রম দিতে গিয়ে প্রাণ হারান কলেজ পড়ুয়া সাজ্জাদ হোসেন। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে এখনো পরিবারের আহাজারি চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাগড়াছড়ি শহরের কলেজ গেইট এলাকায় নুর নাহারের বাসায় মাসিক তিন হাজার টাকায় ছেলে মো. সাজ্জাদ হোসেনকে নিয়ে ভাড়া থাকেন তার মা-বাবা। দুই জনেই ডায়াবেটিকসহ নানা রোগে আক্রান্ত। আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন মিস্ত্রী এক সময় বিভিন্ন ফার্নিচার দোকনে কাজ করলেও অসুস্থ্যতার কারণে আর সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় পরিবারের হাল ধরেন কলেজ পড়ুয়া ছেলে সাজ্জাদ হোসেন। পড়া-লেখার পাশাপাশি শ্রম দিতেন। যা পায় তা দিয়ে মা ও বাবার জন্য ঔষধ কিনতেন ও বাকি অর্থ দিয়ে সংসার চলতো।
মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন মিস্ত্রী জানান, ছেলে ছিল সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিন মাসের ঘর ভাড়া পড়ে গেছে। সামনের দিনগুলো কীভাবে পার করবো জানি না।
এদিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কেন্ডিলিবারের ছাদ ধসে নিহত সাজ্জাদ হোসেনের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি পরিবার। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ নিহত সাজ্জাদ হোসেনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এ সময় ওয়াদুদ ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এ শ্রমিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার দাবি করেন। এ সময় খাগড়াছড়ি জেলা
বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছারসহ জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, নকশা ক্রটি ও নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে অবহেলার কারণে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের কেন্ডিলিবারের ছাদ ধসে দুই শ্রমিক নিহত ও ৫ শ্রমিক আহত হন। কলেজ পড়ুয়া ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন নিহতদের মধ্যে একজন।