‘গোষ্ঠী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ গড়ি, সম্প্রীতির খাগড়াছড়ি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেখাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের উদ্যোগে পুনরায় বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মং সার্কেল চিফ মং প্রু সেইনের শিক্ষাবৃত্তি ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ১শ ৩ জন শিক্ষার্থীকে ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। পাহাড়ে সেনাবাহিনীর এমন মহতি উদ্যোগ চিরদিন উদাহরণ হয়ে থাকবে।
বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুরে খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদ-মর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ,খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, খাগড়াছড়ি মং সার্কেল চীফ সাচিংপ্রুু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি সদর জোন কমান্ডার কমান্ডার (পিএসসি) লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।
খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্টাফ অফিসার (জিটুআই) মেজর মো. জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় আরো উপিস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশিরুল হক ভূঞা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) গোলাম মোহাম্মদ বাতেন ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শানে আলম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, মহান মুক্তিযুদ্ধে খাগড়াছড়ির মং সার্কেল চিফ মংপ্রু সেইনের বিরল অবদান রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত না পেলেও খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন ১৯১৮ সালে তার নামে শিক্ষাবৃত্তি চালুর মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সে থেকে প্রতি বছর খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন সে বৃত্তি দিয়ে আসছে।পাহাড়ে সেনাবাহিনীর এমন মহতি উদ্যোগ চির দিন উদাহরণ হয়ে থাকবে।
জানা গেছে, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনালগ্নে ১নং সেক্টরের অন্যতম সূতিকাগার ছিল রামগড়। চট্টগ্রাম থেকে রামগড় যাবার পথেই মানিকছড়ির মং সার্কেল চীফ মং প্রু সেইনের বাড়ি’র অবস্থান। ফলে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক এবং সামরিক সংগঠকদের সহজ যাতায়াত পথ ছিলো ফটিকছড়ি থেকে মানিকছড়ি হয়েই। জীবন বাঁচাতে পলায়ন উম্মুখ হাজার হাজার শরণার্থীরা মাঝপথে বিশ্রামের জন্য বেঁচে নিয়েছেলেন ‘মং রাজবাড়ি’-কে।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িস্থ ‘মং রাজ বাড়ি’ বৃহত্তর চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা এবং শরণার্থীদের কাছে ছিল নির্ভরতার এক অনন্য ঠিকানা। চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি লাগোয়া এই রাজবাড়ি’র কর্ণধার প্রয়াত মং সার্কেল টিফ মংপ্রু সেইন মুক্তি সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উদার চিত্তে শামিল হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এবং শরণার্থীদের আশ্রয় ও রসদ প্রদানে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন সার্কেল প্রধানের মধ্যে একমাত্র মং সার্কেল চিফ মং প্রু সেইন-ই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছিলেন। রাজ ভাণ্ডার উদার করে দাঁড়িয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এবং শরণার্থীদের কাতারে। তিনিই আমাদের অস্থায়ী সরকারের কাছে ১১শ ডলার দান করেছিলেন। যা ছিল প্রথম বৈদেশিক মুদ্রা প্রদানের ঘটনা। শুধু কী তাই, তিনি রাজ পরিবারের ৩৩টি বন্দুক এবং কয়েকটি দামি গাড়িও তুলে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। কিন্তু তার এ অবদান রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি মেলেনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে খাগড়াছড়ির মং সার্কেল ছিফ মংপ্রু সেইনের বিরল অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে ২০১৮ সালে খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন উদ্যোগ নেয়। সে থেকে প্রতি বছর খাগড়াছড়িতে এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনকারী কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘সার্কেল চিফ বীর মুক্তিযোদ্ধা মং প্রু সেইন’ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়।