পার্বত্য খাগড়াছড়ির নয়টি উপজেলার মধ্যে সর্বাধিক জনবহুল উপজেলা মাটিরাঙ্গা। উপজেলার জিরো পয়েন্ট থেকে উত্তরে ৪৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মাটিরাঙ্গা-তানাক্কপাড়া সড়ক। এটি একটি গুরুত্বপুর্ণ ও সীমান্ত সড়ক। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কোচ ,নাইটকোচ চলাচল করে এই সড়কে। নব্বই দশকে সড়কটি এইচবিবি (সলিং) এবং বিংশ শতাব্দিতে কার্পেটিং করা হয়। এই সড়ক নির্মাণ শেষে গত ২৯ অক্টোবর ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০মিটার দৈর্ঘ্য গোমতি সেতুসহ ৩টি দৃষ্টিনন্দন গার্ডার সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন।
বর্তমান সময়ে দৈর্ঘ্য ও এলাকার আয়তন অনুসারে ব্যস্ততম একমাত্র এক লেনের সরু সড়কটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে পরিনত হয়েছে। সড়কটি সরু ও ঘন ঘন বাঁক থাকায় গাড়ি ক্রসিং কিংবা ওভারটেক করার সময় কার্পেটিং সীমানার বাহিরে চলে যায়। এতে প্রায়ই সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। জরুরী ভিত্তিতে টার্নিং পয়েন্ট সোজা ও সড়ক প্রসস্ত করা না হলে বর্ষায় সড়কটি চলাচলে আরো ঝুঁকিপুর্ন হয়ে পড়বে।
এখনও পর্যন্ত সীমান্তবর্তী এই সড়কটি ধরে দুইটি খাদ্য গুদাম, ২টি বিজিবি ব্যাটালিয়ন ও ২৫ টি বিওপি ক্যাম্প, একটি পূর্ণাঙ্গ পুলিশ থানা ,একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, একটি পুলিশ ফাঁড়ি, ৭টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার আংশিক লোক প্রতিদিন এ সড়কে চলাচল করে। বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এই জনপদে ৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমপিও এবং নন এমপিও ভুক্ত প্রায় ১০ টি হাই স্কুল, একটি কলেজ, একটি আলিম মাদ্রাসা, দুইটি ফাজিল মাদ্রাসা ও বেশ কয়েকটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ছাড়া ও বিভিন্ন প্রাইভেট ও এনজিও পরিচালিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এ সকল প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরকি কার্যক্রম উপজেলা সদর থেকে নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় প্রায় প্রতি দিনই সংশ্লিষ্টদের মাটিরাঙ্গা সদরে আসতে হয়। কমিউনিটি ক্লিনিক ছাড়া সক্রিয় কোন হাসপাতাল না থাকায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এ সড়ক দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসতে হয়।
মিল কারখানাহীন কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপন্য যেমন, সিজনাল ফল, ধান ,আম, কাঁঠাল, কচুরছড়া, আদা, আনারস , লিচু, বারমাসি ফল কলা, পাহাড়ী বাঁশ, কাঠ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়। পাহাড়ী এই এলাকায় রেল,জল,আকাশ কিংবা বিকল্প কোন পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে সরু এক লেনের সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। এক কথায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সামরিক,আধা সামরিক, বেসামরিক, শিক্ষা,চিকিৎস্যা ও প্রশাসনিক সকল কাজে চলাচলের একমাত্র সড়ক মাটিরাঙ্গা-তানাক্কাপাড়া সড়ক।
এ ব্যাপারে সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী তাইন্দং ইউনিয়নের তানাক্কাপাড়া বাসিন্দা ৪নং ওয়ার্ড সদস্র মো. সেলিম রানা বলেন, মাটিরাঙ্গা-তানাক্কাপাড়া সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত যানবাহন ও মালবাহী পরিবহন চলাচল করে। এতে ক্রসিংয়ে অনেক অসুবিধা হয়। সড়কটি দুই লেন করা হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে। তাছাড়া পর্যটন সম্ভাবনাময় ভগমান টিলায় পর্যটক বাড়বে।
তবলছড়ির বাসিন্দা জয়নাল আবদিন সেলিম বলেন, রাস্তা সরু হওয়ার কারণে গত ২১ জানুয়ারি ধনমিয়া সর্দারপাড়া স্থানীর মোটর সাইকেল চালক সোহেল ও একজন পথচারি নিহত হয়। জরুরী ভিত্তিতে রাস্তার দুই দিকে সম্প্রসারণ করা দরকার।
স্বাস্থ্যকর্মী আক্রই মারমা বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এই রাস্তায় চলা চল করতে হয় । নিরাপদে পথ চলতে সড়ক প্রশস্ত করা খুবই জরুরী।
এছাড়াও সিএনজি চালক মো. লিটন বলেন, রাস্তা অনুসারে গাড়ি বেশি,শুধু সিএনজি চলার জন্য এ রাস্তা উপযোগি। বড় গাড়ি বিশেষ করে বিআরটিসি ছোট গাড়ি গুলোকে চলার সময় রাস্তায় অন্য গাড়ি ক্রস করার জায়গা থাকে না। কাঠের গাড়িগুলো সামনে পড়লে সাইড দিতে অনেক সময় ২০ থেকে ৫০ ফুট পিছনে আসতে হয়। রাস্তা বড় হলে এ সমস্যা হতো না।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতোপুর্বে (২ বছর পুূর্বে) মাটিরাঙ্গা-তানাক্কাপাড়া সড়ক প্রশস্ত করণের লক্ষে রোডস এন্ড হাইওয়ের নিকট প্রস্তাবনা পাঠনো হয়েছে। আশা করছি খুব শিঘ্রই তা বাস্তবায়ন করা হবে।
এ সময় খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখানে নতুন। প্রস্তাবনা পাঠানোর বিষয় আমি অবগত নই। গত নভেম্বরে অত্র অফিসে যোগদান করার তিনদিন পর মাটিরাঙ্গা-তানক্কাপাড়া,ও গৌরাঙ্গপাড়া-পানছড়ি সড়ক পরিদর্শন করেছি। গৌরাঙ্গপাড়া-পানছড়ি সড়কে কিছু কাজও করা হয়েছে। জেলার গুরুত্বপূর্ন ৩টি সড়ক ,মাটিরাঙ্গা-তানাক্কপাড়া,গৌরাঙ্গপাড়া-পানছড়ি, মারিশ্যা -বাগাইছড়ি ও সাজেক সড়কসহ পর্যায়ক্রমে জেলার ১২ফিটের সকল সড়ক ১৮ ফিটে প্রশস্ত করা হবে। তবে কবে নাগাদ তা করা হবে সঠিক ভাবে বলতে না পারলেও সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে আপনাদেরকে সুসংবাদ দিতে পারবো বলে আশা করছি।