প্রথমে বলি, কখনো ভাবতে পেরেছেন ঐতিহ্যবাহী মনোঘরে বিশাখা ভবনের পাশে রেজাউর রহমান নামে কোনো গার্লস হোস্টেল হবে? লেখাটি সামাজিক, ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিক পারপেস্টিভ থেকে বলছি। যদি বাংলাদেশের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বলি তাহলে বলবো ধর্মভীরু দিক দিয়ে মুসলিমরা বিশ্বে অদ্বিতীয় যেখানে চাকমারা এর ধারেপাশেও নেই। পাহাড়ের মসজিদগুলো দেখুন ২০ বছর আগে যেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে এখনো সেভাবেই আছে। একইভাবে হিন্দু মন্দিরগুলোও। অথচ চাকমাদের বিহারগুলো বছরে বছরে চেঞ্জ হয়। মন্দির-মসজিদগুলোর চেহারা যে অপরিবর্তিত থেকে যায় কি তারা দরিদ্র বলে নাকি ধর্ম মানেনা বলে?
পাহাড়ের অর্থনীতির শক্তি মুসলিম এবং হিন্দুদের হাতে। অথচ, তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ হয় না। তারা তাদের অর্থ নিজেদের উন্নয়নে ইনভেস্ট করে। মসজিদ উন্নয়নের দরকার পড়ে না বলে পাহাড়ের মুসলিমদের তাদের অর্থের একটি অংশ মাদ্রাসাতে চলে যায়। যেখানে তাদের সমাজের দরিদ্র ছেলে-মেয়েরা আবাসিক সুবিধাসহ পড়াশুনা করতে পারে।
পাহাড়ের শিক্ষা হার এখন সমানে সমান। অথচ, ৪০ বছর আগে এরা পাহাড়ের এসেছিল শূন্য অবস্থায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ভুরি ভুরি পাহাড়ের বাঙালি। আর আগামী দিনগুলোতে চাকরি বাজার তাদের হাতে চলে যাবে। কেননা ৮০’এর দশকের চাকরিজীবীরা অধিকাংশই অবসরের পথে। হিন্দুদের কথা যদি বলি তারা আগা-গোড়া ব্যবসায়ী এবং ১০ -১২টি গ্রাম মিলে তাদের একটি মাত্র মন্দির। ফলে ধর্মের পিছনে এদের খরচ নেই বলে চলে। অন্যদিকে চাকমাদের অধিকাংশ গ্রামে দুটি করে বিহার। চট্টগ্রামেও চাকমাদের ৪টি বিহার।
এক দশক আগে রাজ বন বিহারের ৩০০ -৪০০ ভিক্ষু ও শ্রমণের জন্যে সিয়ং ব্যবস্থা কোন ব্যাপারই ছিলোনা। শুধু তাই নয় , ৩০০-৪০০ ভিক্ষু শ্রমণকে সিয়ং খাওয়ানোর পরেও অনেক খাবার লেকের পানিতে ফেলা দেওয়া হতো। অথচ আজ সেই রাজ বন বিহারে ১০০ জন ভিক্ষু শ্রমণের জন্য সিয়ং ব্যব্যস্থা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রায় পাঁচ দশকের প্রাচুর্য্য-প্রতিপত্তি সম্পন্ন প্রধান এই ধর্মীয় কেন্দ্রে কি করুন অবস্থা !
রাঙমাটি সদরের চারিদিকে কুটির ছড়িয়ে পড়ায় প্রধান কেন্দ্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফ্যাক্ট হলো যতই বন বিহার ছড়িয়ে পড়ছে ততই সাধারণ মানুষের অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়ছে। অথচ গত এক দশকে মানুষের আয়-উন্নতি যেভাবে বেড়েছে এতে প্রধান বিহারে ১,০০০ জন ভিক্ষু – শ্রমণের সিয়ং এর ব্যবস্থা হওয়ায় কথা। বন বিহারের দ্বিতীয় কেন্দ্র খাগড়াছড়ি ধর্মপুর আর্য্য বন বিহারেরও একই পরিণতি। পানছড়ির শান্তিপুর অরণ্য কুটির এবং দীঘিনালা বন বিহারেরও একই পরিণতি হবে। তারা লাইনে আছে মাত্র। কারণ চাকমাদের ধর্মের উন্নয়ন ও প্রতিযোগিতার শেষ নেই এবং হবেও না।
নিত্য নতুন ধর্মের গুরু আবির্ভাব হচ্ছেন এবং নতুন নতুন বিহার গড়ে উঠছে। পুরাতন ছেড়ে সবাই নতুনের দিকে। এটাই চাকমাদের একটা মরণের নেশা। একটা সময় গিয়ে শান্তিপুর অরণ্য কুটিরের উপযোগিতা শেষ হবে। এই কুটির থেকে আগামী এক দশকে ডজন ডজন ধর্মীয় গুরু সৃষ্টি হয়ে পানছড়ির চারদিকে ছড়িয়ে পড়বেন। চলবে বিহার নির্মাণ এবং ধর্মের উন্নয়নের রেস। সাথে বাড়বে গাড়ির রেসও । সেই সকল রেস্’এর কুপ্রভাব এসে পড়বে শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে। কিন্তু আমরা এতোটা কানা যে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোও দেখতে পাই না , শিক্ষা নেওয়া সে তো অকল্পনীয়।
এক একটি বিহার এলিট। ভিক্ষুরা মিনারেল ওয়াটার ছাড়া কোন পানি পান করেন না, সব কিছু রাজকীয়। গাড়ি লাগবে, বেতনধারী ড্রাইভার একজন, গাড়ির মেইনটেন্যান্স খরচ , ইন্সুরেন্স এবং আরো কত কিছু। শুধু মধ্যম সারির একটি বিহার পরিচালনা করতে মাসিক খরচ লক্ষাধিক টাকা। এবার হিসাব করুন সমগ্র পাহাড়ে মাসিক কত কোটি টাকা এলিট বিহারের পিছনে খরচ হচ্ছে। সৎ ও ভালো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি হলে বলতাম, এটি একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট।
আমরা থামবো কখন? কতটুকু ধর্মের উন্নয়ন ঘটলে আমরা থামবো? আমরা কি পরিকল্পনা নিতে পারি না? আমেরিকায় কত কিলোমিটার ডিস্টেন্সে Walmart করা যাবে তা কোম্পানির নীতি আছে। একইভাবে সকল কর্পোরেট গ্যাস স্টেশন , স্টোররেও ও। এর কারণ যাতে ফ্রেনসাইজ ওনাররা আর্থিক ক্ষতির মুখে ন পড়েন। কিন্তু চাকমাদের বিহার নির্মাণে নেই কোন পরিকল্পনা বালাই, মন যা চাই যত্রতত্র বিহার গড়ে উঠছে। এতে গ্রাম -সমাজ যেমন ভেঙে পড়ছে তেমনি সাধারণ মানুষের অর্থনীতির উপর চাপ বাড়ছে। সাধারণ মানুষ , গ্রাম , সমাজ ও জাতির উন্নয়ন সে তো অনেক দূরের কথা।
উপরোক্ত বিষয়গুলো যদি আমাদের চোখ খুলে না দেয় বুদ্ধ এসেও এ জাতির পতন ঠেকাতে পারবেন না। বাঙালিরা সব ক্ষেত্রে চাকমা-মারমাদের ডিঙিয়ে যাচ্ছে। পাল্লা দিতে না পারলে তাদের গোলামী করতে হবে। আগামী দিনগুলোতে চাকরি বাজার যাবে তাদের হাতে। দেখবেন তোমাদের মেয়েরা নেই। যে মেয়েটি সারা জীবন বিহারে গিয়েছিল সেই আজ সেটলার ঘরে সংসার করছে। আমি রেসিজমের কথা বলছিনা। বর্তমান এবং আগামী দিনের চরম সত্য ও বিপদের কথা বলতেছি।
লেখক: আমেরিকা প্রবাসী