দেশের পূর্ব সীমান্তের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম কক্সবাজার রামু-বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক। এই সড়কে প্রায় দুই লাখ মানুষের চলাচল। তবে সড়কে থাকা বেইলি ব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।
এছাড়াও সড়কটির চওড়া মাত্র ১০ ফুট, কিছু অংশে ১১ ফুট। মিয়ানমার সীমান্তে টহলরত বিজিবির হাজারো সদস্যের খাদ্য, অস্ত্র, গোলা-বারুদসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক উন্নয়নে ব্যবহৃত গাড়ির চওড়া সাড়ে ৮ ফুট। কাভার্ডভ্যানের প্রস্থ সাড়ে ৮ ফুট। দূরপাল্লার মালবাহী গাড়ির চওড়াও সাড়ে ৮ ফুট। যে কারণে নাইক্ষ্যংছড়ি-বান্দরবান সড়কে চলাচলকারী পূর্বানী বাস চলাচল করলে সড়কের কোন অংশ ফাঁকা থাকে না।
সড়কে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে গাড়িগুলো। এমন কি সড়কে গাড়ি চলাচলের সময় মানুষও হাঁটতে পারে না। এমতাবস্থায় বিপরীত দিক থেকে ট্রাক, মালামাল ও যাত্রীবাহী গাড়িগুলোর কী অবস্থা হয় বলা মুশকিল বলে মন্তব্য করেন গাড়ি চালক ও অভিজ্ঞজনরা।
ট্রাক চালক নুরুল ইসলাম বলেন, এ সড়কের দুপাশের এবং পূর্বাংশের রয়েছে পাহাড় আর বিস্তৃর্ণ বনাঞ্চল। পাহাড়ের মাঝখানের সমতল ভূমির ধান ও খাদ্যের ক্ষেত-খামার আর নানা প্রজাতির ফলের বাগান। এগুলো পরিবহনে লাগে ট্রাক বা মালবাহী গাড়ি। এ গাড়ি যাতায়াত করে এ সড়কে । পক্ষান্তরে সড়ক কতৃপক্ষ সাইনবোর্ড টাঙগিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ২০ টনের অধিক ভারী কোন যানবাহন এ সড়কে চলতে পারবে না। এখন গাড়ি চালক আর সাধারণ মানুষ কী করবে?
তবে মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎ করে সড়কের জারুলিয়াছড়ি ছড়ার বেইলি ব্রিজটির পাটাতনে নষ্ট হয়ে চরম ঝুঁকিতে পড়ায় ছুঁটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা। তিনি তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন যেন এ ব্রিজ দিয়ে ৫ টনের অধিক কোন যানবাহন চলাচল না করে।
এরই মধ্যে পরদিন বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সড়ক বিভাগ তড়িঘড়ি করে বিকল্প সড়ক না করে সংস্কার কাজ শুরু করেন। যাতে জনদুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। বিশেষ করে কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভা থেকে ফিরে আসা লোকজন বেশী এ দুর্ভোগে পড়েন।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবসার ইমন ও সাবেক প্রধান শিক্ষক মংশৈ প্রু মারমা বলেন, সড়কটি দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হলেও এখনো কোন সংস্কার হয়নি। চওড়া অতি সামান্য হওয়ায় গাড়ি চলাচলে নানা জটিলতা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে দুর্ঘটনা এ সড়কের নিত্যসঙ্গী। কারণ, সড়কের পূর্বাংশে ৬টি ইউনিয়নের আড়াই লাখ মানুষ ছাড়াও রাবার ও চা বাগানসহ বাইরের হাজার হাজার লোকজন চলাচল করে। এছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ও মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীদের ব্যটালিয়ন জোনও বয়েছে। বিশেষ করে এ সড়কের জারুলিয়াছড়ি ব্রিজসহ ৫টি বেইলি ব্রীজের পাটাতন উঠে যাচ্ছে ১-২ দিন পরপর। যাতে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
এভাবে নাইক্ষ্যংছড়ির সদর ও রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন ছাড়াও দোছড়ি, গর্জনিয়া, বাইশারী ও সোনাইছড়ির চেয়ারম্যানরা একই দাবি তুলেছেন।
তারা সকলে এই সড়কের কারণে দুর্ভোগের বিষয়টি পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ও সাইমুম সরওয়ার কমল এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু মো. ইসমাঈল নোমান বলেন, সড়কের দুপাশ ও পূর্বাংশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩ শতাধিক। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আছে ৩০ হাজারের অধিক। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলা খাদ্য-শস্য ভাণ্ডার খ্যাত কচ্ছপিয়া ও গর্জনিয়া ইউনিয়নসহ সীমান্তের ৬ ইউনিয়নের উৎপাদিত পণ্য বেচাকেনার হাট গর্জনিয়া বাজারের পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনিয়া বাজার সড়কটির সম্প্রসারণ খুবই দরকার। সবস্তরের গাড়ি ও যাত্রী সাধারণের কষ্টের সীমা নেই বলে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত সকলে।
নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ১১ বিজিবি অধিনায়ক ও জোন কমান্ডার লে. কমান্ডার মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) র ব্যাটালিয়ন সদর, বিওপিসহ অনেক অফিস বা স্থাপনা রয়েছে। জরুরি মুহূর্তে সীমান্তে যাতায়াতে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কই একমাত্র ভরসা। কিন্তু সড়কটির চওড়া এতো ছোট যে দুটি গাড়ি পাশ দিয়ে যেতে অনেক সময় লাগে। রিক্সা নিয়ে সাধারণ জনগণ চলাচল করছে। এখন সীমান্ত ও জননিরাপত্তার জন্যে এ সড়কের সম্প্রসারণ প্রয়োজন আছে।