বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:০৮ অপরাহ্ন

পাহাড়ি ছেলেমেয়েরা আলো ছড়াচ্ছে বাংলাদেশের খেলার অঙ্গনে

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৩২ পঠিত

ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠির মধ্য থেকে উঠে আসা বিপুল সংখ্যক ক্রীড়াবিদ বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বিভিন্ন খেলায় জাতীয় পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতেছেন।

কিন্তু এতসবের পরেও একটা প্রশ্ন থেকেই যায় – এটাই কি যথেষ্ট? আমাদের জাতীয় ক্রীড়ার অঙ্গনকে আলোকিত করতে এ সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্য কি কেউ আছে? যাদেরকে উপযুক্ত সুযোগ দিলে তারাও আলো ছড়াতে পারতো?

লেকি চাকমা যখন প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু করেন, তখন বিষয়টি তিনি নিজের পরিবারের কাছে গোপন রেখেছিলেন। প্রতিদিন অনুশীলনের জন্য তাকে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে রাঙামাটি ক্রিকেট একাডেমিতে যেতে হতো। অবশেষে পরিবারের কাছে ধরা পড়েন তিনি, করা হয় মারধর। তিনি যেখানে থাকতেন সেখানে কোনো সুযোগ-সুবিধা বা উপযুক্ত ক্রিকেট সরঞ্জাম ছিল না।

কিন্তু এতসব প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের স্বপ্ন থেকে সরে আসাকে বিকল্প হিসেবে দেখেন নি তিনি। শেষমেশ গত বছর বাংলাদেশ মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা করে নিজের একটি নাম তৈরি করেন তিনি।

লেকির স্থানীয় প্রশিক্ষক টেলেন্ট চাকমা গণমাধ্যমকে বলেন, “লেকি একজন নির্ভীক ক্রিকেটার। শুরু থেকেই সে কঠোর পরিশ্রম করেছে, এমনকি সুযোগ পেলেই ছেলেদের সাথে খেলেছে। সমস্ত প্রতিকূলতা পেরিয়ে সে জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটি তার জন্য কেবল শুরু।”

জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে উঠে আসা বিপুল সংখ্যক ক্রীড়াবিদ বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বিভিন্ন খেলায় জাতীয় পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতেছেন। কিন্তু এতসবের পরেও একটা প্রশ্ন থেকেই যায় – এটাই কি যথেষ্ট? আমাদের জাতীয় ক্রীড়ার অঙ্গনকে আলোকিত করতে এ সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্য কি কেউ আছে? যাদেরকে উপযুক্ত সুযোগ দিলে তারাও আলো ছড়াতে পারতো?

সাম্প্রতিক সময়ে নারী ফুটবল দলে সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় এসেছে সম্ভবত পার্বত্য অঞ্চল থেকেই। বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল সম্প্রতি তাদের প্রথম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে। বিজয়ী এ দলে মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার এবং টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকসহ পার্বত্য অঞ্চল থেকে উঠে আসা বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছেন।

মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা, এবং রূপনা চাকমা পাশের সবচেয়ে সাধারণ মুখ।

নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে হওয়া প্রথম গোলে সহায়তা করেন মনিকা। টুর্নামেন্টের মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।

অন্যদিকে, এ টুর্নামেন্টে দুটি গোল করেন ঋতুপর্ণা।

তবে গোলরক্ষক রূপনা চাকমা সম্ভবত তাদের সবার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। পাঁচ ম্যাচে মাত্র একটি গোল হাতছাড়া হয় তার। টুর্নামেন্টের সেরা কিপার নির্বাচিত হয়েছেন এই খেলোয়াড়।

গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আনাই এবং আনুচিং মোগিনি ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি নাম। আনাইয়ের গোলেই বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হলেন আন্তর্জাতিক ট্রফি বিজয়ী বক্সার সুরা কৃষ্ণ চাকমা।

রাঙামাটির একটি ক্রীড়া পরিবারে বেড়ে উঠেছেন সুরা। তার বাবা ও চাচাও বিভিন্ন খেলায় যুক্ত ছিলেন।

সুরা কৃষ্ণ চাকমা বলেন, “খেলাধুলা আমার রক্তে মিশে আছে। আমি খুব ছোটবেলা থেকেই খেলা শুরু করি। প্রথমে আমি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ফুটবলের জন্য ট্রায়াল দেই, কিন্তু উচ্চতার কারণে বাদ দেওয়া হয় আমাকে। তারপর আমি বক্সিংয়ে যাত্রা শুরু করি।”

জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন বরুন বিকাশ দেওয়ান। রাঙ্গামাটির বাসিন্দা বরুন ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ২১ বার বাংলাদেশ ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি ১৯৯০ এশিয়ান গেমস দলের অংশ ছিলেন।

তার বড় ভাই অরুণ বিকাশও বাংলাদেশ ফুটবল দলের হয়ে খেলেছেন।

গত মাসে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার জিতেছেন বরুন। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে ফুটবল এবং নিজের সম্প্রদায়ে গৌরবময় অবদানের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হয়।

“এটি আমার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। আমি ফুটবল এবং বাংলাদেশের জন্য যা করেছি তার জন্য আমি যথাযথ স্বীকৃতি পেয়েছি,” বলেন তিনি।

সুশান্ত ত্রিপুরা বাংলাদেশের ফুটবলের উজ্জ্বল তরুণ প্রতিভাদের একজন। কক্সবাজারের ছেলেটি এরই মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে আটবার খেলেছেন। তিনি বর্তমানে আবাহনী লিমিটেডের হয়ে খেলছেন; এর আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে খেলেছেন।

দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে শুধু খেলোয়াড়েরই জন্ম দিয়েছে তা কিন্তু নয়, এই একই সম্প্রদায় থেকে উঠে এসেছেন বাংলাদেশের প্রথম ফিফা লাইসেন্সপ্রাপ্ত মহিলা রেফারি জয়া চাকমা।

ফুটবলের তুলনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা জাতীয় ক্রিকেটারের সংখ্যা নগণ্য। ইতোমধ্যেই অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার লেকি চাকমার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা একমাত্র জাতীয় ক্রিকেটার হলেন রাঙামাটির চম্পা চাকমা।

চম্পা ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের হয়ে নয়বার খেলেছেন। চীনের গুয়াংজুতে ২০১০ এশিয়ান গেমসে রৌপ্য জয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি।

তারা ছাড়াও, ফুলপতি চাকমা ২০১৬ সালের এসএ গেমসে রৌপ্যসহ ভারোত্তোলনে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতেছেন।

সেকাল-একাল

জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে নানা ধরনের খেলাধুলার বিকাশ ঘটলেও নিয়মিত স্থানীয় টুর্নামেন্ট নিয়ে হাহাকার রয়েছে খেলোয়াড় ও কোচদের মধ্যে।

ফুটবল স্থানীয়ভাবে একটি জনপ্রিয় খেলা। ব্যাডমিন্টনও জনপ্রিয়, তবে এটি একটি মৌসুমী খেলা। এ সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ তরুণই ফুটবলে আগ্রহী। যদিও এ চিত্র ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে, তবু ফুটবল এখনও আধিপত্য বিস্তার করে আছে।

১৯৮০ এবং ৯০ এর দশকে আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হত। এমনকি ২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে খেলোয়াড়দের জন্য কিছু স্থানীয় টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে টুর্নামেন্টের সংখ্যা কমেছে।

সংগঠক ও কোচ হিসেবে কাজ করা বরুন বিকাশ বলেন, “আমরা নিয়মিত আন্তঃস্কুল টুর্নামেন্ট খেলতাম, গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টও খেলতাম। এখনকার তুলনায় অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট হতো তখন। এছাড়াও, স্থানীয় টুর্নামেন্টগুলো আজকাল অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।”

অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে ক্রিকেট এবং ফুটবল উভয়ই খেলাতেই নাম লেখানো খেলোয়াড় ও বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার লাইসেন্সপ্রাপ্ত রেফারি ডেভিড চাকমা বলেন, স্থানীয় টুর্নামেন্টের অভাবে নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় জাতীয় স্তরের ক্রিকেট খেলোয়াড় তৈরি করতে পারেনি।

পার্বত্য অঞ্চলে ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে ক্রিকেট। এই খেলার জন্য সর্বদা উপযুক্ত সুবিধার অভাব ছিল। নিজস্ব অর্থ খরচ করে এ খেলা খেলতে হতো বলে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী ছিল না তারা।

এছাড়াও, ক্রিকেট এবং ফুটবল দুটি খেলার জন্যেই একটি মাত্র জেলা স্টেডিয়াম রয়েছে।

“স্থানীয় টুর্নামেন্টের অভাব রয়েছে, তাই মানুষ তেমন আগ্রহী নয়। এর পরিবর্তে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ফুটবল বা ব্যাডমিন্টন খেলে। শীতকালে একটি বা দুটি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়, তবে তা যথেষ্ট নয়। কয়েকটি একাডেমি আছে কিন্তু তারা নিয়মিত নয়,” বলেন ডেভিড চাকমা।

কিন্তু জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে আসা মেয়েদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সামনে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। মেয়েরা ২০১৬ সাল থেকে খেলাধুলায় বেশি সক্রিয়, বিশেষ করে ক্রিকেট। সদ্য সমাপ্ত মহিলা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রাঙামাটির আটজন মেয়ে খেলেছে।

প্রতিকূলতাও রয়েছে অনেক

স্থানীয় খেলোয়াড়দের এগিয়ে যাওয়ার পথে আর্থিক সমস্যা একটি বড় বাধা। তারা স্থানীয় টুর্নামেন্টে ভাল বেতন পায় না, এমনকি তাদের ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যৎ নিয়েও থাকে নানা শঙ্কা।

ডেভিড চাকমা বলেন, “স্থানীয় ফুটবলে কোনো ম্যাচ ফি নেই এবং এটি একটি নিয়মিত বিষয়। খেলোয়াড়রা ক্যারিয়ারের নিরাপত্তা চায়।”

তিনি যোগ করেন, “এখানে খেলোয়াড়রা ম্যাচ খেলে ৫০০ টাকা পায় না। এমনকি একজন দিনমজুর এক ঘণ্টা কাজ করে তার চেয়ে বেশি আয় করে।”

টেলেন্ট চাকমা বলেন, “স্থানীয় ফুটবলের মতো স্থানীয় ক্রিকেটাররাও বেতন পান না। বিসিবি আয়োজকদের টাকা দেয়, কিন্তু খেলোয়াড়রা তা পায় না।”

বান্দরবানের দুই ভাই শোভন ত্রিপুরা ও জীবন ত্রিপুরা ছোটবেলা থেকেই একসঙ্গে ফুটবল খেলতেন। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি ট্যালেন্টেড হওয়া সত্ত্বেও জীবন ফুটবল ছেড়ে উচ্চশিক্ষা এবং চাকরির খোঁজে খেলা ছেড়ে দেন। শোভন এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের একজন সদস্য। স্নাতক শেষ হলে তাকেও ফুটবল ছেড়ে দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

“আমিও সম্ভবত একই কাজ করব (হাসি), যেহেতু আমি একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি, আমাকে আমার জীবিকা নির্বাহ করতে হবে এবং আমার পরিবারের যত্ন নিতে হবে। আমি এখানে খেলার কোন উপযুক্ত সুযোগ পাব এমন কোন নিশ্চয়তা নেই,” বলেন তিনি।

স্থানীয় টুর্নামেন্টের খেলোয়াড়দের শুধুমাত্র সকালের নাস্তা এবং হোটেল ভাড়া দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক ডিসি গোল্ড কাপে খেলোয়াড়দের একটি ম্যাচের জন্য ২০০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল।

স্থানীয় খেলোয়াড়দের আরেকটি বাধা কোটা পদ্ধতি। ডিসি গোল্ড কাপে বাইরে থেকে তিনজন খেলোয়াড়ের কোটা ছিল। কিন্তু এখন দলগুলো বাইরের খেলোয়াড় এমনকি বিদেশিদের নিয়ে আসছে। স্থানীয় খেলোয়াড়রা তাদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাচ্ছেন না।

বক্সার সুরা কৃষ্ণ চাকমা মনে করেন উপযুক্ত একাডেমির অভাবও একটি সমস্যা।

“তরুণ খেলোয়াড়দের সঠিকভাবে পরিচর্যার অভাব রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের জন্য এই তরুণ প্রতিভাদের উপযুক্তভাবে গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় একাডেমি খুব কমই আছে। বিশেষ করে রাঙামাটিতে,” বলেন সুরা।

সুরা কৃষ্ণ, সুশান্ত ত্রিপুরা বা মনিকা চাকমা- দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সময় তাদের জাতিগত সংখ্যালঘু পরিচয়ের কথা ভাবেন না তারা। তাদের একটাই পরিচয়, বাংলাদেশি। লেকি চাকমা বলেন, “আমি রাঙামাটি, বান্দরবান বা অন্য কোথাও থাকি না কেন, আমি এখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছি। এটাই গুরুত্বপূর্ণ।” নিখাদ প্রতিভার এই সোনার খনিগুলোকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করা হলে তাদের প্রতিভা যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয় হবে।

সূত্র: টিবিএস

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Let's check your brain 3 + 4 =

একই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved 2022 CHT 360 degree