কক্সবাজারের পেকুয়ায় জায়গাজমির বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের বর্বরোচিত হামলায় এক ব্যবসায়ীর বসতঘর ভাংচুর ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ইট পাটকেলে ঘরের মালিক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মিয়া (৭০) ও তার ছেলে কাইয়ূম উদ্দিন (৩০) আহত হয়েছে। আহতদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ভুক্তভোগীরা পুলিশ সেবা ৯৯৯ এ কল করলে পেকুয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা চলে যায়।
ঘটনাটি ঘটে ২৬ আগস্ট (শুক্রবার) ভোর ৬ টার দিকে সদর ইউনিয়নের মাতবরপাড়া এলাকায়। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনার পর পরই পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আহত কাইয়ুম জানান, সকালে কেউ ঘুম থেকে উঠছে আবার কেউ ঘুমানো ঠিক এসময় আমাদের পাশ্ববর্তী মৃত রমজান আলীর ছেলে রুবেল তার ঘরের ছাদ থেকে রুবেলের নেতৃত্বে তার বোনের জামাই ইসমাইল মেম্বার, মোকতার, রুবেলের ভাই সোহেল, বোন রুবিসহ ৮ থেকে ১০ জন বহিরাগত লোক আমাদের টিনের ছাউনি ঘরে ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমরা টের পেলে ৯৯৯ এ কল করে পুলিশ আনি। এসময় তারা ঘরের টিনের ছাউনি ফাটিয়ে জালি জালি করে ফেলে। ঘরের ব্যাপক ক্ষতি করে।
এদিকে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ মিয়া জানান, পাশ্ববর্তী মৃত রমজান আলীর ছেলে মোহাম্মদ রুবেল গং এর সাথে বসতভিটার জায়গাজমি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধ নিরসন করতে স্থানীয় ইউপির গ্রাম আদালতে মামলা করি। ওই মামলায় চেয়ারম্যান আমার পক্ষে রায় দেয়। এ রায় তারা অমান্য করায় আমি বাদী হয়ে পুনরায় চকরিয়া বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত এ রুবেল গং এর বিরুদ্ধে মামলা করি। যার নং ১৬৪/২২। মামলাটি আমলে নিয়ে উকিল কমিশনের মাধ্যমে জরিপ ও পরিমাপ করে আদালত।
পরে উকিল কমিশনার আমার পক্ষে আদালতে প্রতিবেদন দিলে রুবেল গং ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। আদালতের রিপোর্ট অনুয়ায়ী আমি ১৫ খড়া জমি প্রাপ্ত হয় রুবেল গং থেকে। উক্ত জায়গা বুঝিয়ে না দিয়ে পাকাঘর নির্মাণ করলে আমি বাদী হয়ে আদালতে ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করি। এর প্রক্ষিতে আদালত উক্ত বিরোধীয় জায়গায় ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে রুবেল গং ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয় এবং এখানে বসবাস করলে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি চাঁদা দিতে অপারগ
হলে ঘটনার দিন ভোরে তারা পরিকল্পিতভাবে রুবেলসহ তার বোনের জামাই ইসমাইল মেম্বার ও বিডি আর হেলাল হত্যা মামলার আসামি মোকতারসহ আরো কয়েকজন তাদের ঘরের ছাদ থেকে ইট মেরে মেরে আমার বসতঘরের টিনের ছাউনি ফাটিয়ে জালিজালি করে ফেলে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি প্রশাসনের কাছে।
এ বিষয়ে ইসমাইল মেম্বার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনায় আমি ছিলাম না। ইউ এনও ম্যাম আমাকে কল করলে আমি ডকুমেন্টস নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই।
প্রতিপক্ষকের মোকতার আহম্মদ বলেন, মৃত রমজান আলী ১৯৯৪ সালের ১২ জুন ২২৮৩ নং দলিলমূলে ৯৪৫ নং খতিয়ানের ১৮৬৮নং দাগের ২৪ শত জায়গা খরিদ করে নামজারি জমাভাগ খতিয়ান সৃজিত করে যার নং ২৭০২। মৃত রমজান গং তাদের প্রাপ্ত জমির চেয়ে আরো ৬ শতক জমি কম পায়। বর্তমানে মোহাম্মদ মিয়া বাদী হয়ে ৮ শতক জায়গার বিরোধ দেখিয়ে মামলা করে। সেই মামলায় আদালত ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মোহাম্মদ মিয়া ঘটনার দিন ও আগের দিন বিরোধীয় জায়গায় লোক দিয়ে গাছ কাটা শুরু করে। এতে বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে ইট পাটকেল নিক্ষেপ হয়। এতে চাঁদা চাওয়ার কোন কথা আসেনি।
এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফরহাদ আলী বলেন, ঘটনা শুনে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।