রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:২৩ অপরাহ্ন

প্রকল্প নেয়া একবছর পার হলেও কাজ করেননি ইউপি চেয়ারম্যান

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২
  • ২০ পঠিত

স্থানীয়দের পানি সুবিধার জন্য আমাদের পাড়া প্রকল্প নেওয়া হয়েছিলো। প্রকল্পটি নেওয়া এক বছরের বেশি সময় চলে গেছে। কিন্তু এখনো পানির নতুন লাইন স্থাপন করা হয়নি। নতুন লাইনতো দূরের কথা পুরোনো যেসবা লাইন নষ্ট হয়েছে সেগুলোও ঠিক করেননি। এ ধরনের ঘটনাতো সবার কাছে একটা খারাপ উদাহরণ। সরকারি কাজ সব খানে কি এভাবে হয়? এ প্রতিবেদকে এমনটাই জানান বান্দরবানের রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কানান পাড়া প্রধান লালদনখুম বম।

কানান পাড়ার ৫০ বছর বয়সী লালটানপার নামে এক নারী বলেন, ‘পাড়ার জন্য নতুন বরাদ্দ দিলে যে কেউ সেই উন্নয়নমূলক কাজটি করিয়ে দেয়া উচিত।’

আমরাতো নারী। ঘরে হাঁড়ি পাতিল ধোয়ামোছা থেকে রান্নাসহ সব কাজ করি। কিন্তু আমাদের কানান পাড়ায় পানি সুবিধার জন্য সরকার বাজেট দিয়েছে, সেটা চেয়ারম্যান টাকা তোলার পরও কাজ না করার বিষয়টি খুব খারাপ লাগছে, বলেন লালটানপার।

কানান পাড়ার আরো এক নারী গোলময় কিম (২৭) বলেন, ‌‘আমাদের পাড়ায় পানি সরবরাহ কাজ না করার বিষয়টি সামনা-সামনি (সরাসরি) মন্ত্রীকে (পার্বত্যমন্ত্রী) বলতে পারলে খুব আত্মতৃপ্তি পেতাম।’

এক প্রশ্নের জবাবে অতি উৎসাহে গোলময় কিম বম বলেন, ‘আমি বীর বাহাদুরকে সামনে পেলে ডাইরেক্ট কথা বলতে পারব। আমরা নৌকায় ভোট দিয়েছি।’

‘জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বমও নির্বাচন আসলে শুধু নৌকায় ভোট দিতে বলে। এখনতো আমাদের পাড়াকে ভুলে গেছে সবাই’ এই বলে মুশকি হাসলেন গোলময় বম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বান্দরবান পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কর্মসূচির আওতায় পাইন্দু ইউনিয়নের ৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ প্রদান করে। যেটি সরকারিভাবে এই খাদ্যশস্যের মূল্য ২২ লাখ টাকার বেশি।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে পাঁচটি প্রকল্পে পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমাকে সভাপতি করে ছাড়পত্র দেয়া হয়। তারমধ্যে ১০ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দের একটি প্রকল্পের নাম ‘কানান পাড়া পানি পাইপলাইন সরবরাহ’।

সরকারি খাদ্যগুদাম সূত্র মতে, বর্তমান চালের মূল্য কেজি প্রতি ৪৭ টাকা ২৫ পয়সা। এই হিসাবে ১০ মেট্রিক টন চালের মূল্য চার লাখ ৭৫ হাজার ৩শ টাকা।

তবে এই টাকায় পানির পাইপ লাইন সরবরাহের কাজ করার তো দূরে থাক, পুরানো লাইন নষ্ট হয়ে যাওয়া পাইপের সামান্য জয়েন্ট পর্যন্ত মেরামত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন কানান পাড়া কারবারি লালদনখুম বম।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, পাড়ায় যে পানির পাইপ লাইনটা রয়েছে, সেটা ১০ বছর আগে উপজেলা পরিষদ থেকে দেয়া। আর ১ হাজার লিটার প্লাস্টিকের ট্যাংকটি ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের একটি প্রকল্প থেকে দেয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেয়া আরেকটি প্রকল্প- নতুন পাড়া বেসরকারি স্কুলে আসবাবপত্র বিতরণ। বরাদ্দ – ১০ মেট্রিকটন।

ওই বিদ্যালয়েও কোনো আসবাবপত্র বিতরণ করা হয়নি, বলেছেন- শুক্রমনি পাড়া প্রধান কারবারি সম্বুনাথ তঞ্চঙ্গ্যা ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুনথন বম।

স্থানীয়রা জানায়, মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কর্মসূচির আওতায় পাইন্দু ইউনিয়নের ৪, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের গরীব ও অসহায়দের মাঝ হাঁস মুরগী ও ছাগল বিতরণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের বিপরীতে ১০ মেট্রিক টন সব খাদ্যশস্য উত্তোলন করা হলেও প্রকল্প এলাকার গরীব অসহায় লোকজনের মাঝে কোনো হাঁস, মুরগী ও ছাগল বিতরণ করা হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুঠোফোনে পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, প্রকল্পগুলোর অনেক আগের, তাই প্রকল্পে কী হয়েছে, হয়নি তা আমার মনে নেই বলে কল কেটে দেন। পরে তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও প্রকৌশলী শাখার কার্যসহকারী উনেউইন বলেন, রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের এসব গৃহীত প্রকল্পের বিপরীতে বিল ভাউচার দাখিল করলেও সেখানে দায়িত্বরত জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বম কর্তৃক অনাপত্তি হয়, তখন বিল ভাউচারগুলো গ্রহণ করে মাস্টাররোল সমন্বয় সাধন হবে। তাই জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বমের সঙ্গে কথা বলে নিতে বলেন পিআইও উনউইন।

এক প্রশ্নের জবাবে পিআইও উনেউইন বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা ভারতে রয়েছেন। তিনি ফিরলে বিষয়টি তাকে সব জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রকল্পের কাজগুলো বিন্দুমাত্র বাস্তবায়ন ও তার কী ধরনের দায়িত্ব রয়েছেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বম বলেন, তাকে প্রকল্পগুলো খোঁজ নিতে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। ঠিক তাই গৃহীত প্রকল্প এলাকার কারবারি বা মোরব্বীদের সেখানে কি কাজ করা হবে, তা জানিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রকল্প চেয়ারম্যান বা পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং একবারও প্রকল্পের কাজ নিয়ে যোগাযোগ করেননি।

উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) সভাপতি লালনুনোয়াম বম বলেন, প্রকল্প নিয়ে কাজে না করা এটা অন্যায়। এসব দুর্নীতি যাতে না করে, তাই এলাকাবাসীকে সচেতন হতে হবে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো যায় কিনা, সেটা তার কমিটি সভা করে মতামত নেবেন বলেও জানান তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Let's check your brain − 6 = 2

একই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved 2022 CHT 360 degree