বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ।
সোমবার (১০ অক্টোবর) ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন বলে জানান বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ মেহেদী হোসাইন কবির।
বিজিবি জানিয়েছে, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সীমান্ত পরিস্থিতি পরিদর্শন করছেন বিজিবির মহাপরিচালক।
দুপুর ২টায় সীমান্ত পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে রেজুপাড়া বিওপিতে সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সম্পর্কে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে ছোঁড়া প্রত্যেকটি গুলির হিসেব বিজিবির রয়েছে। মর্টারশেল নিক্ষেপ ও আকাশসীমা অতিক্রমসহ প্রত্যেকটি ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা কূটনীতিকভাবে উত্তরও পাঠিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে চেষ্টা করা হচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সাথে পতাকা বৈঠক করার। ইতোমধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। শীঘ্রই ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সবকিছু সরাসরি উপস্থাপন করা হবে।’
এদিকে সোমবার (১০ অক্টোবর) ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের ৩৪ ও ৩৫ পিলার রাইট বিজিপি ক্যাম্প ও তাদের চৌকি থেকে অগণিত মর্টার ও আর্টিলারি বোমা বিস্ফোরণের আওয়াজে যেন সীমান্তের এপারে ভূমিকম্প হচ্ছিল এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা তুমব্রু বাজারের ব্যবসায়ী মির আহমদ (৫০)।
তুমব্রু বাজার জামে মসজিদে ফজরের নামাজ পড়তে আসা মুসল্লি মোয়াজ্জেম ও ইমাম জানিয়েছেন, ওপারে বিস্ফোরণের কারণে ফজরের নামাজের সময় অনেকটা ভয় কাজ করছিল।
ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, ভোর মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে আবারও ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণ শোনা গেছে। এতে সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটা গ্রাম কেঁপে ওঠেছে।
এদিকে সীমান্তের কাছে না যাওয়ার জন্য স্থানীয়দের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, প্রায় দুই মাস ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, কোনারপাড়া, উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি ও চাকমা পাড়াসহ উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে ছোড়া মর্টার শেলসহ বিভিন্ন গোলাবারুদ বাংলাদেশে এসে পড়ে। মিয়ানমারের জেট ফাইটার হেলিকপ্টারও কয়েকবার আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে। গত কিছুদিন আগেও মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক বাঙালির পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এছাড়াও মর্টার শেলের আঘাতে ঘুমধুমের কোনারপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত এবং পাঁচজন আহত হন।
সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির উত্তেজনাকর এ পরিস্থিতি এখন বিভিন্ন সীমান্তে ছড়িয়ে পড়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।