বান্দরবানে পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী গ্রুপের অবস্থানকে কেন্দ্র করে জরুরি এক সাংবাদিক সম্মেলন করেছে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা ।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে এই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সকল সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা জানান, ১৮ সেপ্টেম্বর একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ বিকাল ৩টা থেকে ৪টার দিকে বান্দরবান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করে। আর সন্ত্রাসী গ্রুপের এই অবস্থানকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকার মাঝে। এই সন্ত্রাসী গ্রুপ কেন এসেছে, কী কারণে সেখানে অবস্থান করেছে তা কেউ জানে না। তাই বান্দরবানবাসী তথা সকল সচেতন মহলকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য তিনি আন্তরিক আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জানান, ১৮ তারিখ স্কুলভিত্তিক বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য আমি বান্দরবান স্টেডিয়ামে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অবস্থান করি। এই সময় আমার স্কুলের পিয়ন আমাকে ফোন করে জানান স্কুলের মধ্যে অস্ত্রধারী কিছু সন্ত্রাসী এসেছে, তাদের কাছে বিভিন্ন ভারী অস্ত্রশস্ত্র আছে । যাতে আমি জরুরিভাবে স্কুলে আসি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি স্কুলে গেলে সন্ত্রাসী গ্রুপ তাকে জানায়, এক রাতের জন্য তারা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশ্রাম করবে। তখন তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তাদের সেখানে অবস্থান করতে দেন এবং পরদিন ভোরবেলা তারা স্কুল থেকে চলে যায়।
পরিশেষে সাংবাদিক সম্মেলনে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, বান্দরবান শান্তিপ্রিয় জায়গা। এখানে একটা সন্ত্রাসী গ্রুপ অবস্থান করেছে, তার জন্য মানুষ আতঙ্কে আছে। কিন্তু তাদের এই অবস্থানের কোনো কারণ কেউ জানে না, তাই তিনি সকল গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে সকলকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান।
সাংবাদিক সম্মেলন করে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা এই বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর মারমা ন্যাশনাল পার্টি (এমএনপি)’র পক্ষ থেকে ফেসবুকে এর কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এমএনপি কমান্ডো মংথেন নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে বলা হয়েছে, ‘আমাদের মারমা সম্প্রদায়ের কিছু সংখ্যক জাত বেঈমান কুলাংঙ্গার ব্যক্তির কারণে ভারতের মদদপুষ্ট জেএসএস সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি এবং বাঙ্গালিদের উপর হামলা করতে সাহস এবং সুযোগ পায়। অন্যদিকে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দল এবং এমএন লারমা জেএসএস সংস্কাররা কীভাবে বান্দরবান জেলা শহরের অস্ত্র নিয়ে থাকার সুযোগ পায়? এই প্রশ্নের উত্তর বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার কাছে জানতে চাই?’
আরো বলা হয়েছে, ‘যেমন গত শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্ব) বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার অনুরোধে এমএনপির সদস্যরা বান্দরবান জেলায় প্রবেশ করে। পরের দিন তার আশ্রয়ে বান্দরবান সদর উপজেলা রাম জাদি তংপ্রু পাড়া নামক স্থানে অবস্থান করে। রবিবার ১৮/০৯/২০২২ইং তারিখে আবার তার অনুরোধে রাতের ভাতের খাওয়ার জন্য এমএনপির সদস্যদেরকে বান্দরবান জেলা শহরের উজানী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করার জন্য অনুমতি দেয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকের (মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা তার দাপ্তরিক কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।’
‘সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা প্রশ্ন তুলে বলেন, এতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকতে এমএনপি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কীভাবে জেলা শহরে প্রবেশ করে? মূলত বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা এরকম বেমানান ভাষায় এমএনপির বিরুদ্ধে কথা বলার কারণ হচ্ছে?’
এমএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, ‘মূলত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএনপিকে তার কথা মত চলতে বাধ্য করতেই এটা করেছেন। তিনি চান, তার কথা মতো খুন, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি করে চাঁদাবাজির ভাগ তাকে দিতে হবে। প্রায় এমন শর্ত দিয়ে বিগত জাতীয় নির্বাচনে ২০১৮ ইং সালে মগপার্টি সৃষ্টি করে। কিন্তু তাঁর দেওয়া শর্তগুলো পূরণ না হওয়ায় এবং এমএনপি সদস্যরা যথাযথভাবে তার মনের আশা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এমএনপি বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছেন তিনি।’
এমএনপির পক্ষ থেকে আরো অভিযোগ করে বলা হয়, ‘সাধারণ নীরিহ মানুষের প্রতি অমানবিকভাবে জুলুম অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে যেতে হবে বলে অনেক শর্ত দিয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। কিন্তু এমএনপি সদস্যরা সাধারণ নীরিহ মানুষের জন্য কাজ করে বলে এমন জুলুম অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে যেতে মোটেও রাজি নয়।’
এমএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘জেএসএসের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে দিয়ে বান্দরবান পুরো জেলায় এখন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার কথায় ও ইন্ধনেই যত অপরাধ কুকর্ম খুন গুম অপহরণ চাঁদাবাজি, নির্যাতন, নিপীড়ন, ক্যশৈহ্লা মারমার হুকুমেই হয়। বিগত দিনেও বান্দরবান জেলাতে জেএসএসের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে আওয়ামী লীগের যত নেতাকর্মী গুম, খুনের শিকার হয়েছে, এসব খুন গুম অপহরণ তারই ইন্ধনে ও নির্দেশে হয়েছে। বান্দরবান জেলার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার ব্যক্তিদের নাম যেমনঃ (১) রাজভিলা ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামের মংচিংউ মারমা, (২) জামছড়ি ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের নেতা বাচনুং মারমা, (৩) বান্দরবান তারাছা ইউনিয়নের তালুকদার পাড়া ( হ্নাকোওয়া) রোওয়া উথোয়াইনুং মারমা, (৪) বান্দরবান পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চথোয়াইমং মারমা, (৫) বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলা তারাছা ইউনিয়নের তালুকদার পাড়া (হ্নাকোওয়া রোওয়া) মংমংথোয়াই মারমা। এসব খুনের পিছনে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা জড়িত আছে।’
‘এসব জঘন্য অপরাধের কাজগুলো তিনি কোনদিন এড়িয়ে যেতে পারবেন না। কেননা, সবই তো তাঁর ইন্ধনে এবং হুকুমের হয়ে থাকে। জেএসএসের চাঁদাবাজির টাকা ভাগ পায় বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা। তা নাহলে নিজের দলের লোকজন জেএসএসের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পরও আজ অবধি জেএসএসের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন তিনি কেন করেননি? এতেই উবলব্ধি করা যাচ্ছে যে, জেএসএস সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে বান্দরবান জেলা সাধারণ নীরিহ মানুষের প্রতি অমানবিকভাবে গুলি করে হত্যা করার সুযোগ কে করে দিয়েছে।’
‘এজন্য এমএনপির পক্ষ থেকে অতি ক্ষোভ এবং তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি আজকের ক্যশৈহ্লা চেয়ারম্যান সাংবাদিক সম্মেলনে এমএনপির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ও অভিযোগ করায় এমএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।’