এক হিসেবে কাতারকে সৌভাগ্যবান রাষ্ট্র বললেই চলে। কেননা, ফিফা বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম আরব-মুসলিম দেশ হিসেবে দেশটি বিশ্বকাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়; এটি সর্বকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও শীতকালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ।
স্বাভাবিকভাবেই এই আসরকে উপলক্ষ্য করে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নানা ধর্মের-বর্ণের দর্শক ও ভক্তরা আগমন করেন। আর সেই সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে কাতার। দেশটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে- বিশ্বকাপ চলাকালে আগত অতিথিদের সামনে ইসলামের শিক্ষা ও পরিচিতি তুলে ধরতে কাজ করবে তারা।
গত বৃহস্পতিবার আলজাজিরা জানায়, ইসলাম প্রচারের পুরো প্রকল্পটি দেখভাল করবে কাতারের আওকাফ ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ উপলক্ষে দেশটি একটি বিশেষ প্যাভিলিয়ন চালু করেছে।
আলজাজিরার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যাভিলিয়নে বিভিন্ন ভাষায় মুদ্রিত ইসলাম ও আরব সংস্কৃতির পরিচিতিমূলক বই বিতরণ করা হবে। দর্শকদের সাথে তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য থাকবেন সেই ভাষার দাঈ বা ইসলাম প্রচারক। বিশেষত উপসাগরীয় দেশ কাতারের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে দর্শনার্থীদের কাছে। এতে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি বা ভিআর প্রযুক্তির সাহায্যে দেখানো হবে পবিত্র কাবাঘর, হাজরে আসওয়াদসহ মক্কা ও মদিনার ঐতিহাসিক ইসলামী স্থাপনা।
এরই মধ্যে বিশ্বকাপের আয়োজন ঘিরে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত কাতার। এ উপলক্ষে নতুনভাবে সেজেছে দেশটি। আরব ও ইসলামী স্থাপত্যশৈলীকে ধারণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ৮টি স্টেডিয়াম। রাজধানী দোহাসহ বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো হয়েছে মহানবী সা:-এর হাদিস সম্বলিত ম্যুরাল। সামাজিক শিষ্টাচার নিয়ে মহানবী সা:-এর প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণীগুলো লেখা হয়েছে আরবি ও ইংরেজি ভাষায়। অর্থপূর্ণ হাদিসগুলো চলার পথে দর্শক ও পাঠকদের মনে তৈরি করবে ভিন্নরকম অনুভূতি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ছবি ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।
কাতারের অভিনব এই আয়োজনের প্রশংসা করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের মহাসচিব ড. আলী আল-কারাহ দাগি। তিনি বলেছেন, ‘কাতার বিশ্বকাপ ঘিরে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ইসলামের সুমহান বার্তা ছড়িয়ে দিতে অভিনব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেয়ালে আরবি ও ইংরেজিতে লেখা হয়েছে মহানবী সা:-এর অর্থপূর্ণ হাদিস। এমনটি সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’
এ প্রসঙ্গে আলজেরিয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক হাফিজ দারাজি লিখেছেন, ‘বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগেই নতুন সাজে সেজেছে কাতার। এর দেয়ালে বর্ণিল রূপে প্রকাশ পাচ্ছে ইংরেজি অনুবাদসহ মহানবী সা:-এর হাদিস। এর মাধ্যমে কাতার নিজের ইসলামী সংস্কৃতি ধারণের পরিচয় দিয়েছে।’
ফুটবল বিশ্বকাপ ঘিরে এমন উদ্যোগের প্রশংসায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক তামির আল-মিসহাল লিখেছেন, ‘বিশ্বকাপ উপলক্ষে আগত ভক্তদের ইসলামের সাথে পরিচিত করতে মহানবী সা:-এর বাণী দিয়ে সাজানো হয়েছে দোহার দেয়ালগুলো। আরবিতে লেখা হাদিসগুলোর পাশাপাশি ইংরেজি অনুবাদও সংযুক্ত করা হয়েছে।’
উপসাগরীয় দেশ কাতারের পাঁচটি শহরের ৮টি স্টেডিয়ামে এবার ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২০ নভেম্বর আল বাইত স্টেডিয়ামে এর উদ্বোধনী ম্যাচের মাধ্যমে বিশ্বকাপের পর্দা উঠবে এবং ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা নামবে জমকালো এ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ক্রীড়া আসরের।
সূত্র : আলজাজিরা