প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ‘আদিবাসী’ শব্দটি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং এ দেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের মধ্যেকার তুমূল বাক-বিতণ্ডা, পরস্পর বিরোধী সংঘর্ষোন্মুখ লেখালেখি, স্বপক্ষীয় যুক্তি প্রদর্শন, বিবৃতি, প্রকাশনা ইত্যাদি চলছে। ‘আদিবাসী’ শব্দটি নির্ঝঞ্ঝাট এবং অতি প্রাঞ্জল হলেও এ শব্দটির প্রয়োগ নিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্বে গুটিকতক স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অপপ্রয়াস নিহিত আছে বলেই আজ রাষ্ট্রের কাছে এ সুন্দর শব্দটি এতো তিক্ত, নেতিবাচক আর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে দেখা দিয়েছে। কোন স্বার্থান্বেষী মহলের অপরিপক্ক রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণেই এদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরা যে শব্দটি প্রয়োগ করতে উদগ্রীব সে শব্দটিকে সরকার মনে করছে একটি অবান্তর শব্দ বা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে একটি অপপ্রয়াস। আজ সবকিছুই এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, সরকারের কাছে যেটি সুন্দর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের কাছে একেবারে কুৎসিত, আবার যেটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কাছে নান্দনিক ও সুমধুর সেটি সরকারের কাছে মোটেই শ্রুতিমধুর বা মুখরোচক নয়। মোদ্দ কথা, উভয়পক্ষের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য, লেখালেখি ও বিবৃতির মধ্যে সাংঘর্ষিকতা এখন তুঙ্গে।
‘আদিবাসী’ অর্থটি সাধারণত অনেকেই (বাঙ্গালী আর আদিবাসীপন্থিরা) রাজনৈতিক মেরুকরণের স্বার্থে ব্যবহৃত ইতিবাচক অর্থ আর ‘উপজাতি’ অর্থটি একেবারেই নেতিবাচক অর্থ মনে করছেন। প্রকৃতপক্ষে এ শব্দদ্বয়ের অর্থ সেইরূপ নয়। অনেক ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ অর্থটি প্রান্তিক উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে বুঝাচ্ছে। একইভাবে ‘উপজাতি’ শব্দটিও সেইরূপ। ‘উপজাতি’ অর্থটি যেমন একটি সংগঠনের একই নেতাকর্মী দল থেকে উপদল-এ বিভক্ত হবার মতো। এটিকে জেলা থেকে উপজেলার সৃষ্টি হবার মতোও নয়। এটি অপূর্ণাঙ্গ জাতি বুঝাচ্ছে তাও নয়। একটি বৃহৎ জাতিসত্তা কালক্রমে বিভক্ত হয়ে উপজাতি এমনকি গোত্র-উপগোত্র পর্যন্ত বিভক্ত হয়েছে। এটি আমরা টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস অববাহিকা অঞ্চলের মতো মানবজাতির উষালগ্নের ইতিহাস বা সভ্যতার ইতিহাসে মানবজাতির বিভাজনের ইতিহাস, এমনকি সমাজ বিজ্ঞানেও মানব জাতির ক্রমবিকাশের ইতিহাস আমরা দেখেছি। সেক্ষেত্রে আমাদের জাতিগত শব্দত্রয়: ‘আদিবাসী’ বা ‘নৃগোষ্ঠী’ এমনকি ‘উপজাতি’ শব্দটি ব্যবহারেও যৌক্তিকতা রয়েছে। আমরা শব্দ দুটি: ‘আদিবাসী’ বা ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ ব্যবহার করতে পারি। ‘উপজাতি’ শব্দটিও বাংলা তর্জমায় আদিবাসীপন্থিদের কাছে নেতিবাচক বা মানহানিকর শব্দ মনে হলেও ইংরেজিতে ট্রাইব (tribe) শব্দটি নেতিবাচক হিসেবে কোন ল্যাক্সিকোগ্রাফার এবং নৃবিজ্ঞানীগণ সেইরূপ বিশ্লেষণ করেননি। তদ্রূপ ‘আদিবাসী’ শব্দটি খুববেশি ইতিবাচক তাও নয়।
কাজেই, সরকারিভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা বড় বিষয় নয়, স্বীকৃত না হলেও প্রয়োজনবোধে প্রতিবছর দিবসটি সামনে এলে স্বেচ্ছায় পালন করা সম্ভব। যেমনটি করে আসছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পালিত হচ্ছে। এ দিনটি রাষ্ট্রের অধিপতি বা ক্ষমতাধারী বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ব্যতিরেকে একটি দেশের বসবাসরত অনগ্রসর জনগোষ্ঠীরা যথারীতি সকলেই এ দিবসটি পালন করতে কোন সমস্যা নেই। পালন না করলেও কোন বিতর্ক নেই। তবে এ দিবসটি পালনকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী মহল ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বুলি আওরিয়ে অনুষ্ঠানটিকে অন্যখাতে প্রবাহিত করা সমীচীনও নয় অর্থাৎ এ শব্দটির চয়ন এবং প্রতিস্থাপনকে কেন্দ্র করে কোনো জনগোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সরকার বা ভূ-খণ্ডকে হুমকি-ধমকি দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো সংঘর্ষোন্মুখ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা মোটেই কাম্য নয়। পিসিজেএসএস-এর নেতৃত্বে দেশ-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে অহেতুক অপপ্রচার, অসদাচরণ বা জাতীয় পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্যেই ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রয়োগের প্রতি আজ সরকারের এতো ঘৃণা, অস্বীকৃতি বা অনিহা। সেই জন্যই সাংঘর্ষিক এবং এতো বিরোধী। নির্দ্বিধায় বলা যায় পিসিজেএসএস-এর নেতৃবৃন্দের অপরিপক্কতা বা অবিমৃশ্যকারিতার জন্যেই আজ ‘আদিবাসী’ সাংবিধানিক স্বীকৃতিতে সরকারের এতো টালবাহানা বা অনিহা।
যাইহোক, ‘ট্রাইবাল’ বা ‘উপজাতীয়’ শব্দ প্রভূত কাজে ব্যবহার নিয়ে আমরা কিছু কথা বলি। দ্রৌপদী মূর্মুকে বাংলাদেশ ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্রিকায় বলা হয়েছে ‘দ্য ফার্স্ট প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া ফ্রম ট্রাইবাল কমিউনিটি’ (মানে নিখিল ভারতের একজন উপজাতীয় জনগোষ্ঠী হিসেবে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন)। ভারতের সংবিধানেও উল্লেখিত সিডিউলে ‘ট্রাইব’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা এখনো সমগ্র ভারতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সিডিউল্ড ট্রাইব (scheduled tribe) রয়েছে সেই সব উপজাতিদের কেন্দ্রীয় সরকার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীরাও কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ‘ট্রাইব’ হিসেবে অভিহিত হচ্ছে। অহমী, খাসিয়া, গারো, জৈয়ন্তিয়া, মিজৌ, মেইতেই, নাগা, কুকিদের মতো বৃহত্তর জনজাতিরা ভারতের শিডিউল্ড ট্রাইব-এ অন্তর্ভুক্ত। ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত দ্রাবিড় এবং মঙ্গোলীয় জনজাতিরাও কোন কোন ইতিহাসগ্রন্থে উপজাতি বা জাতি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।
ইদানীং দ্রৌপদী মূর্মুর মতো ঝাড়খণ্ডের উপজাতীয় টুডু গোত্রের মহিলাকে ভারতের মতো অন্যতম সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে। এটি ভারত সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং বর্ণ নিরপেক্ষতার পরিচয়। বাংলাদেশের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীরা বাংলাদেশে ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির আন্দোলন করে আসছে। তবে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ত্রিপুরাগণ ‘ট্রাইব’ বা ‘উপজাতি’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছে। তাদের (বরক জাতিরা) ত্রিপুরা ট্রাইবাল (উপজাতীয়) নামেও একটি পৃথক স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ রয়েছে। একইভাবে চাকমারাও ভারতে শিডিউল্ড ট্রাইব হিসেবে মিজৌরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদ (Autonomous District Council) পেয়েছে। ভারতের খোদ চাকমা জনগোষ্ঠীরাই ‘ট্রাইব’ বা উপজাতি হিসেবে স্ব-শাসনব্যবস্থা এবং ‘ভাগ কর, শাসন কর (Divide & rule)’ নীতিকে সর্বাত্মকভাবে ব্যবহার করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুগ্রহ চেয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে জোর দাবি করে আসছে। কারণ, মূলত ভারতের নর্থ-ইস্ট রাজ্যসমূহে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের রাজনীতিবিদ বা রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ক্ষুদ্রাকারে নিজস্ব শাসনব্যবস্থাই বা ‘ডিভাইড-এন্ড-রুল পলিসি’ই একমাত্র তাদের মতো অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি বলে মনে করেন।
কাজেই, ভারতের মতো ঠিক পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য জনগোষ্ঠীদের ক্ষেত্রে এরশাদের শাসনামলে সরকার ‘ডিভাইড-এন্ড-রুল’ কৌশল প্রয়োগ করতে চেয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠা করা হয় মারমা কল্যাণ সংসদ, ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, ম্রো কমপ্লেক্স এবং বম সোশ্যাল কাউন্সিল। এসব সংগঠনকে জেএসএসপন্থিরা সরকারের দালাল বা ভূঁইফোড় সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। পিসিজেএসএস কর্তৃক প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থ সমূহেও তারা এভাবেই উল্লেখ করেছে। সম্প্রতি কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর ‘পৃথক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল’ দাবিটিও জেএসএস সশস্ত্র আন্দোলনকে দুর্বল করবার স্বার্থে বা জুম্মল্যান্ড আন্দোলনকে নস্যাৎ করবার জন্যে সরকারের অপকৌশল হিসেবে জেএসএসপন্থিরা দেখছে। স্বার্থান্বেষী জেএসএসপন্থি চাকমারা এটিকে সরকারের বিভাজন-নীতিও মনে করছে। তবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী চাকমারা বাংলাদেশে একটি কৌশল ব্যবহার করছে, পক্ষান্তরে ভারতের ভূমিতে তারা ব্যবহার করছে আরেকটি কৌশল। এই উভয় দেশের চাকমাদের আন্দোলনে মদদদাতা হিসেবে কাজ করছে পিসিজেএসএস-এর নেতৃবৃন্দ। তাদের দু’ দেশের দুই কৌশল পরস্পর সাংঘর্ষিক ও বিরোধী। কিন্তু কারোর কথায় কর্ণপাত না করে স্বকীয় জাতিসত্তা রক্ষার্থে যা যেভাবে করা দরকার সেভাবে তারা করে যাচ্ছে। যেমন, ভারতে চাকমাদের আন্দোলন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে নয়, তথা সাংবিধানিক ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের জন্যে আন্দোলন করছে না, বরং তারা আন্দোলন করছে মিজোরামের ‘আদিবাসী’ জনগোষ্ঠী বা বৃহত্তর উপজাতীয় জনগোষ্ঠী মিজোদের বিরুদ্ধে।
কিন্তু বাংলাদেশে চাকমাদের আন্দোলন বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আর তাদের নিকটবর্তী ক্ষুদ্র-জাতিসত্তা কুকি-চিন জনগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে বা মগ জনগোষ্ঠীর (মারমাদের) বিরুদ্ধে । কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমাদের মানসিকতা একটু ভিন্ন। অর্থাৎ তাদের চিন্তা-ভাবনা একটিই তথা সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা এককভাবে তারাই ভোগদখল করবে (যেমনটি করেছে সন্তু লারমা), অন্য কোন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী নয়। অন্যান্য ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীরা সরকারের কাছে উন্নয়নমূলক কিছু চাইলেই সরকারের দালাল বা পদলেহনকারী জনগোষ্ঠী আখ্যা দিবে আর রাজনৈতিকভাবে কোন কিছু দাবি করলেই সামরিকভাবে সশস্ত্র গ্রুপের মাধ্যমে নির্মূলের উদ্যোগ গ্রহণ করবে, কয়েক যুগ ধরে তারা ঐভাবে করেছেও। কয়েক যুগ ধরে স্বগোত্রীয় চাকমাদের সংগঠনের বিরুদ্ধেও করেছে। ইউপিডিএফ নেতারা জেএসএসদের এই অপকৌশলকে বলে ‘ভ্রাতৃঘাতি’ বা ‘নির্মূলনীতি’। এভাবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের খুন, গুম ও অপহরণের মতো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এবং সশস্ত্রভাবে নিরীহ কুকি-চিন জনগণকে সর্বদা সন্ত্রস্ত করছে।
বলাবাহুল্য, ভারতের মিজোরামে বাংলাদেশের চাকমাদের একক আধিপত্যকে আরো মজবুত করবার স্বার্থেই ‘ডিভাইড-এন্ড-রুল পলিসি’র পক্ষে সোচ্চার হচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট আবেদন-নিবেদন করে যাচ্ছে। কাজেই কেএনএফ মনে করছে, বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ চাকমাদের ‘আদিবাসী’ আন্দোলন নামে প্রণীত নক্সা বা কুকৌশল একেবারেই অমূলক। কয়েক বছর যাবৎ বাংলাদেশে জেএসএস-সন্তুপন্থি চাকমাচুক্তি বাস্তবায়নের ফন্দি এঁটে ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির জোর দাবি বোকামি বৈ কিছু নয়। প্রত্যেক ‘আদিবাসী’ দিবসের অনুষ্ঠানে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে বড় বড় কথা বলে আসছে। ৯ আগস্টের বিশ্ব আদিবাসী দিবসে জেএসএসপন্থি বা সন্তু লারমার মস্তিষ্কে শুধু থাকে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট চুক্তি বাস্তবায়ন, কোন সমতলের সমস্যা সমাধানে নয়। আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে জেএসএসপন্থি নেতৃবৃন্দ আলাদা ব্যানার তৈরি করে। সেই ব্যানার-ফেস্টুনগুলো গোপনে বা আলোচনার ঊর্ধ্বে রেখে র্যালি-মানববন্ধন হলেই সামনে থাকা সমতলের নৃ-গোষ্ঠীদের সবার হাতে তুলে দেয়। ব্যানারে লেখা থাকে ‘শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কর’ অর্থাৎ স্বীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে। সমতলবাসীদের ব্যানারে অনেক কিছু লেখা থাকলেও সেইসব ব্যানার সন্তু লারমার কাছে মুখ্য নয়। সমতলের নৃ-গোষ্ঠীর মিছিলকারীরা জানেই না যে তাদের ব্যানারে তাদের স্বীয় অধিকারের কথা উল্লেখ নেই, সমতলে নিপীড়নের কথা থাকলেও স্থায়ীভাবে জাতীয় মুক্তির কথা নেই; শুধু আছে পার্বত্যাঞ্চলের গুটিকতক স্বার্থান্বেষী মহলের স্বাধিকারের কথা। কাজেই বাংলাদেশের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির আন্দোলনে একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সম্পূর্ণ জড়িত তা কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না।
কেন ‘ট্রাইব’ অর্থটি নেতিবাচক নয় সে কারণটি নৃবিজ্ঞানী বা নৃতাত্ত্বিক গবেষকগণ ভালই জানেন। বিশ্বের সভ্যতা প্রারম্ভেই মেসোপোটেমীয় অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের মূলত ‘ট্রাইব’ বলা হতো। টাইগ্রিস নদীর অববাহিকায় যেখান থেকে মানব সভ্যতার উদ্ভব হয়েছিল, সেখানে কোন সুনির্দিষ্ট ইনডিজিনাস পরিচয় ছিল না। আমরা মানব জাতির সোজার্ন বা এক্সোডাস-এর ইতিহাস দেখেছি। সেই ইউফ্রেটিস অঞ্চল থেকেই বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বলা হতো ‘ট্রাইব’। ট্রাইব অর্থটি অসম্মানজনক শব্দ ছিল না, এখনো না। যদিও অনেকেই ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। আজ কেন ‘আদিবাসী’ পরিচয় নিয়ে এদেশে বিরাট কিছু অর্জন হতে যাচ্ছে বা কেন আমরা এ শব্দটিকে খুব বেশি ইতিবাচক দিক মনে করি? সে ব্যাপারেও ইন্ডিজিনাস এক্সপার্ট বা আদিবাসী বিষয়ক বিশেষজ্ঞরাই ভাল জানেন। উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই জানা যায়, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস। বার্মার বিদ্রোহীরা ‘আদিবাসী’ পরিচয় নিয়ে আন্দোলনের কোন কৌশল গ্রহণ করেনি। আর সেই জাতিসংঘের ঘোষিত ধারা- উপধারা নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশে বাঙালিরা আদিবাসী বা আদিম অধিবাসী নয়, তাও নয়। আর এ দেশের পাহাড়াঞ্চলে বসবাসরত মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূদ জাতিসত্তারা সকলেই আদিবাসী নয় তাও নয়। আবার আন্দোলনরত জনগোষ্ঠী সকলেই আদিম অধিবাসী তাও নয়। ঐতিহাসিক বিচারে নিঃসন্দেহে বাঙালিরা বাটেশ্বরী, ময়নামতি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসী। কারণ, বাঙ্গালীদের প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন রয়েছে। তবে বাঙ্গালীরা জনসংখ্যাধিক্যহেতু কালক্রমে সে দেশের ভূখণ্ডের অধিকর্তা বা রাষ্ট্রের অধিপতি, তাই বলেই তো তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর গন্ডির বাইরে আছে। বাংলাদেশের পাহাড়ের মঙ্গোলীয় জাতিরা পার্বত্যাঞ্চলে ‘আদিবাসী’ বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। মারমা-রাখাইনরা (মগরা) কক্সবাজার এবং বান্দরবনে ‘আদিবাসী’। ত্রিপুরারা ত্রিপুরা রাজ্য এবং খাগড়াছড়ি অঞ্চলে ‘আদিবাসী’। কুকি-চিন জনগোষ্ঠীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বাঞ্চলে (বর্তমানে তাদের দাবিকৃত অঞ্চলেঃ কুকি-চিন টেরিটোরিতে) মূল ‘আদিবাসী’ বা প্রথম আগনকারী আদিম অধিবাসী। বর্তমানে আধুনিক জীবনযাপন করতে দেখা গেলেও কুকি-চিন জনগোষ্ঠীরা এ অঞ্চলের আদিম অধিবাসী। বাংলাদেশে বা ভারতের রাজ্য সমূহে আদিমত্ব বা আদিম অধিবাসীর সংজ্ঞাটি মূলত বর্তমানে অনুপস্থিত । আদিবাসীর সংজ্ঞাটিও সুনির্দিষ্ট নয়।
বাংলাদেশে যেমন সরকার ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় বা শঙ্কিত, তেমনি আন্দোলনরত জেএসএসপন্থি জুম্মরাও অস্পষ্ট। বাংলাদেশ সরকার এবং সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীতে এক সময় তার বাণীতে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন এবং ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইস্তেহারে ‘আদিবাসী’শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। একইভাবে জেএসএস সংগঠনের চুক্তিতে ‘উপজাতি’ শব্দটি ব্যবহার করেছিল। তবে জেএসএস নেতারা বিদেশি সংস্থার কারো মদদপুষ্ট হয়ে চুক্তির পর এর বাস্তবায়ন তরান্বিত করবার তাগিদে সন্তু লারমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আদিবাসী পরিষদ (Bangladesh Adivashi Parishad-BAP) সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সন্তু লারমাই উক্ত পরিষদের অদ্যাবধি সভাপতি। আর আন্দোলনের সুবিধার্থে সচিব হিসেবে রাখা হয় গারো সম্প্রদায়ের সঞ্জীব দ্রংকে। এই বিএপি’র নেতৃত্বে এবং জেএসএস-এর পরামর্শক্রমে প্রতিবছর জাতিসংঘে প্রতিনিধি পাঠিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বড় বড় বুলি আওরালে সরকারের টনক নড়ে। এর পর থেকেই সরকার বিএপি আন্দোলনকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছে। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর সরকার ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাহলে এর জন্যে দায়ী কারা- জেএসএস নাকি সরকার?
সরকার কৌশল পরিবর্তন করেছে, একইভাবে জেএসএসপন্থিরাও কৌশল পরিবর্তন করেছে। যেমন, প্রথমাবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন জেএসএস নেতারা তাদের পশ্চাৎভূমিতে ‘জুম্ম’ শব্দটি ব্যবহার করলেও উভার-গ্রাউন্ডে আন্দোলনরত পাহাড়িরা ‘পাহাড়ি’ শব্দটি ব্যবহার করে। পরবর্তীতে ‘পাহাড়ি’ শব্দটির স্হলে ‘নৃ-গোষ্ঠী’ শব্দটি ব্যবহারের জন্যে জেএসএস নেতারা অনেকেই মরিয়া। তাদের আবেদন-নিবেদনের কারণে সরকারকে পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট (টিসিআই)কেও নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট নামে পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিল। জেএসএস বা পাহাড়ের অন্যান্য সংগঠনের পত্র-পত্রিকা বা নিউজ বুলেটিন এবং স্যুভেনিরগুলোতেও ‘নৃ-গোষ্ঠী’ শব্দটির ব্যবহার আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অত্যাধিক দেখেছি। সন্তু লারমা নেতৃত্বে গঠিত আদিবাসী পরিষদ-এর নেতাকর্মীরা এই পরিষদ গঠনের পর বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ‘আদিবাসী’ শব্দ চয়ন ও ব্যবহারের জন্যে কয়েক দশক ধরে আন্দোলনে নেমেছে। এই সংগঠনের পরামর্শদাতা হিসেবে আছেন চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় ওয়াংঝা। জাতিসংঘের অধিবেশনগুলোতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে পিসিজেএসএস-এর প্রচার সম্পাদক প্রবীণনেতা মঙ্গল কুমার চাকমা, বিনোতাময় ধামাই ত্রিপুরা এবং সন্তু লারমার নাতনি জেএসএস প্রতিনিধি আগস্টিনা চাকমা (কানাডা প্রবাসী)।
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, ভারতের রাজ্যসমূহে জাতিগত বিবদমান সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছে সেভাবেই বাংলাদেশেও ক্ষুদ্র-বৃহৎ প্রায় প্রত্যক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নার্থে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর হস্তক্ষেপমুক্ত শাসনব্যবস্থা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। পার্বত্য চট্টগ্রামে বৃহত্তর চাকমা জনগোষ্ঠীর মতো মারমা এবং ত্রিপুরাদেরও আলাদা স্থায়ীভাবে পরিষদ দরকার। বর্তমানে সরকার তা সেইভাবে করেছে বলে মনে হচ্ছে, যেমন, খাগড়াছড়ি পরিষদকে ত্রিপুরা, বান্দরবান পরিষদকে মারমাদের এবং রাঙ্গামাটি পরিষদকে চাকমাদের জন্যে নির্ধারণ করেছে। তবে আঞ্চলিক পরিষদ চাকমাদের নিজস্ব বা স্থায়ীভাবে তাদেরই মনে করে। রাঙ্গামাটিকেও চাকমারা নিজেদের রাজধানী মনে করে। গোপনে তারা ঘোষণা দিয়েছেও। এই শহরেই চাকমাদের রাজপ্রাসাদও রয়েছে। পুরোনো প্রাসাদটি কাপ্তাই লেকের পানির নিচে। কাজেই, ডিভাইড-এন্ড-রুল কৌশল নয়, এটি সকল জনগোষ্ঠীর উন্নয়নার্থে স্ব-শাসনের ব্যবস্থা আবশ্যক। কেননা, বর্তমানে নিজেরা ঐক্যের কথা যত যাই বলুক, সুদূর ভবিষ্যতে এই তিন (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা) বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিরাট আকারে ভাঙ্গন ধরবেই, সেটা অবশ্যম্ভাবী।
সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে এটি শীঘ্রই সমাধানে আসা উচিত। কারণ, অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতা নিয়ে মনোমালিন্য সৃষ্ট হবে, আর সেটিকে কেন্দ্র করেই তাদের মধ্যেই বিভক্তি আপনাআপনি সৃষ্টি হবে। যেমন, মিজোরামে মিজো জনগোষ্ঠীর সাথে ঐক্য চায়নি বলেইতো তাদেরকে পৃথক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রদান করতে বাধ্য হয়েছে ভারত সকরার। সকলের জানা আবশ্যক যে, জাতিসংঘের ঘোষণা হচ্ছে, একটি জনগোষ্ঠীর অধীনে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হওয়া নয়, বিচিত্রতা থাকবে, স্ব-শাসনব্যবস্থা থাকবে ঐক্যতানের মধ্যে। জাতিসংঘের ঘোষণা, সকল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ন্যায্যাধিকার প্রতিষ্ঠা করা অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র ও অনগ্রসর কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর মতো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেও স্ব-শাসনব্যবস্থা সৃষ্টি করা। বাক্ স্বাধীনতা প্রদান করা, স্বাধিকার আন্দোলনের সুযোগ সৃষ্টি করা। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের অবরুদ্ধ করে না রাখা। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে তা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। বৃহত্তর উপজাতীয় জনগোষ্ঠীরা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীদেরকে সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত এবং অবরুদ্ধ করে রেখেছে। কয়েক যুগ ধরে সেখানে নির্মূলনীতি প্রয়োগ করছে। আজ জেএসএস সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরা গেরিলাযুদ্ধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ বলে তাদের বেগতিক অবস্থা, নাহলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীদের উপর পৈশাচিক নির্যাতনসহ খুন, গুম, অপহরণ করতো।
যেকোন দেশ বা রাজ্য বা পরিষদ যার কাছে কেন্দ্রীয় শক্তি তথা রাজধানীয় ক্ষমতা থাকবে তারাই মূল অধিবাসী বা বৃহৎ জাতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরা প্রান্তিক অধিবাসী বা ‘আদিবাসী’। ‘আদিবাসী’ সাংবিধানিক পরিচয় বা স্বীকৃতির জন্যে আজ যারা ‘আদিবাসী’ পরিচয় নিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্বদান করছে, একদিন ক্ষমতা কুক্ষিগত হলে কালক্রমে তারাই মূল জাতি এবং অধিকর্তা হবে। তাদের আন্দোলনের সাঙ্গপাঙ্গ বা সহযোগী অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরাই হবে একদিন তাদের কাছেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি। তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা পুনরায় ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের জন্যে আবার আন্দোলন করতে বাধ্য হবে। এভাবে ‘আদিবাসী’ নামক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের সমস্যা চক্রাকারে ঘূর্ণায়মানতায় থাকবে শতশত বছর ধরে। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর মতো অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসিত বা স্ব-শাসনের ব্যবস্থা প্রয়োজন। এতে উপজাতীয় সমস্যা প্রশমিত হবে। তা যদি হয়, ‘আদিবাসী’য় বিষয়ক তথা ‘আদিবাসী’ শব্দ চয়ন বা ব্যবহার নিয়ে আন্দোলনও অদূর ভবিষ্যতে প্রয়োজন পড়বে না।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে (পাহাড়ে এবং সমতলে) বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙ্গালি সকলেই কুকি-চিন জনগোষ্ঠীদের দাবি আদায়ের সাথে শরিক হোন আর সমর্থন দিন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই ‘আদিবাসী’য় সংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, কৃষ্টি-কালচার সংরক্ষণ সম্ভব। শুধু বিতর্কিত নাম প্রয়োগ বা শব্দ চয়ন নয়, বস্তুতপক্ষে ‘আদিবাসী’দের আদিমত্ব বা ‘আদিবাসী’য় সভ্যতাকে ধরে রাখার আন্দোলন অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কেএনএফ দেখছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে দু-এক দিন বা দু’-এক মাসের মধ্যেই ‘আদিবাসী’র সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ ‘আদিবাসী’ নামে আবার প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্ভব। নচেৎ দু’ দশক নয়, বরং আর কোনদিনই কোনো আমলেই স্বীকৃতি পাবার সম্ভাবনা নেই। সম্পূর্ণ নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার উপর।
এই আজ বিশ্ব আদিবাসী দিবসে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর যৌক্তিক দাবি: এ দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জাতিগত পরিচয় ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার নিয়ে ঝঞ্ঝাটপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা কোন নাগরিকের সমীচীন হয়নি। আর বিতর্কিত শব্দটিকে নিয়ে জনগণকে অস্পষ্ট রাখাও খুব বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠি হিসেবে হোক বা ট্রাইব বা আদিম অধিবাসী হিসেবে হোক কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর জন্যে বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ‘কুকি-চিন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল’ প্রদান করুন। সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা বদ্ধপরিকর। স্ব-শাসনব্যবস্থা নিয়ে এদেশের অনগ্রসর কুকি-চিন জনগোষ্ঠীরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আমরা যুদ্ধ চাই না, চাই না আর কোন রক্তক্ষয়, আমরা স্থায়ী শান্তি চাই।
লেখক: মিজৌরাম, চিন হিলস্ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক এবং মিজৌরামের রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
(তার লেখাটি মিজো ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন এল.এস. পালিয়ান)