রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:৩০ অপরাহ্ন

ভারতে হিজাব নিষিদ্ধ করায় ১৬ শতাংশ মুসলিম ছাত্রীর টিসি সংগ্রহ

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০২২
  • ৩৪ পঠিত

ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক পি এস ইয়াদাপিদিত্য ঘোষণা করেছিলেন যে, চলতি বছরের মে মাস থেকে হিজাব ছাড়া শ্রেণিকক্ষে না এলে টিসি বা ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।

এই ঘোষণার পর ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও সরকার পোষিত কলেজগুলির দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম সেমেস্টারের মুসলিম ছাত্রীদের মধ্যে ১৬ শতাংশ টিসি সংগ্রহ করেছে। আরটিআইয়ে পাওয়া তথ্য মোতাবেক, ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদুপি ও দক্ষিণ কান্নাড়া জেলার সরকারি, সরকারপোষিত কলেজগুলিতে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ৯০০ মুসলিম ছাত্রী বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হয়েছিল, এদের মধ্যে ১৪৫ জনই ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়েছে।

যে কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ নয়, সেখানে অনেকে ভর্তি হয়েছে এবং অনেকে পড়াশোনার সুযোগ না পেয়ে উচ্চশিক্ষায় ইতি টেনেছে। ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি সরকারি, সরকারপোষিত ও কনস্টিটিউয়েন্ট কলেজ রয়েছে। সরকার পোষিত কলেজের তুলনায় সরকারি কলেজ থেকে বেশি সংখ্যক মুসলিম ছাত্রী ট্রান্সফার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছে।

এই হার যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ৩৪ শতাংশ। দক্ষিণ কান্নাড়া ও উদুপি জেলায় মোট ৩৯টি সরকারি ও ৩৬টি সরকারপোষিত কলেজ রয়েছে। দক্ষিণ কান্নাড়া জেলার তুলনায় আবার উদুপির মুসলিম ছাত্রীদের মধ্যে টিসি নেওয়ার প্রবণতা সামান্য বেশি, তা যথাক্রমে ১৩ শতাংশ ও ১৪ শতাংশ। ড. পি দয়ানন্দ পাই-পি সতীশ পাই গভর্নমেন্ট ফার্স্ট গ্রেড কলেজ হল দক্ষিণ কান্নাড়ার এক সরকারপোষিত কলেজ। এই কলেজ থেকে সবচেয়ে বেশি টিসি নিয়েছে মুসলিম ছাত্রীরা।

এখানকার ৫১ জন মুসলিম ছাত্রীর মধ্যে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছে প্রায় ৩৫ জন। হালিয়ানগাড়ি গভর্নমেন্ট ফার্স্ট গ্রেড কলেজের ২০ জন ছাত্রী প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ সেমেস্টারে ক্লাস করার পর টিসি নিয়ে চলে গেছে। এই কলেজের অধ্যক্ষ শ্রীধর বলেন, ‘পড়ুয়ারা তাঁর আবেদনে সাড়া দেননি। এমনকী অনেকে টিসিও নেয়নি।’ হিজাব বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল আজ্জারকাদের গভর্নমেন্ট ফার্স্ট গ্রেড কলেজ। এখানকার ৯ জন মুসলিম ছাত্রী ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়েছে। সরকারপোষিত কলেজগুলির মধ্যে উজিরের এসডিএম কলেজ (১১) ও কুন্দাপুরের ভাণ্ডারকর কলেজ (১৩) থেকে সবচেয়ে বেশি টিসি সংগ্রহ করেছে মুসলিম ছাত্রীরা।

এখন প্রশ্ন হল, ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নেওয়ার পর এই ছাত্রীরা কী করছে? ম্যাঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘গার্লস কনফারেন্সে’ হিবা শেখ জানান, ‘অন্য কলেজে ভর্তি হওয়ার আশা আমার।’ কারস্ট্রিটের এক সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলেন হিবা। তখনই তিনি সেখান থেকে টিসি নেন। ম্যাঙ্গালুরুর ইউনিভার্সিটি কলেজে পঞ্চম সেমেস্টার অবধি পড়া গৌসিয়া এক বেসরকারি কলেজে ভর্তি হতে পেরেছেন কোনও রকমে। ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সূত্রের মতে, গৌসিয়ার ষষ্ঠ সেমেস্টার শুরু হতে পারে ২০২৩ সালের মার্চে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ইয়াদাপাদিত্যের বলেন, ‘বহু মুসলিম ছাত্রী তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিল নিজেদের পছন্দের বিষয় নিয়ে কলেজে ভর্তির ব্যাপারে সাহায্য চেয়ে। তাঁর কথায়, ‘যেহেতু এই সমস্যাটির সমাধান হতে পারে না, তাই আমি তাদের কর্নাটক স্টেট ওপেন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কথা বলেছিলাম।’ এরই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘আমি পড়ুয়াদের বলেছি যে, ধর্মের চেয়ে শিক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ বেঙ্গালুরুতে থাকা মনোবিদ ও সমাজকর্মী রুকসানা হাসান মুসলিম ছাত্রীদের কাছে অনুরোধ করেছেন অতিরিক্ত ‘আবেগপ্রবণ’ না হয়ে পড়তে। কিন্তু ছাত্রীরা হিজাবে অনড়।’

উপ্পিনানগাদির এক ফার্স্ট গ্রেড কলেজে হিজাবকে ঘিরে সংঘর্ষ দেখা গিয়েছিল। আরটিআই করার পর এই কলেজ জানিয়েছে, কোনও পড়ুয়া কলেজছুট হয়নি। এই তথ্য যাচাই করতে গিয়ে এই কলেজের অধ্যক্ষ শেখরের সঙ্গে বার্তালাপ করা হয়। তিনি স্বীকার করেছেন, দুই মুসলিম ছাত্রী কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার জেলা সভাপতি আতাউল্লা পুঞ্জলকাট্টে বলেন, ওরা যে তথ্য দিচ্ছে তা থেকেই স্পষ্ট, কলেজছুটদের হার অনেক বেশি। পুবের কলম

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Let's check your brain 35 + = 41

একই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved 2022 CHT 360 degree