শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০২:০৬ অপরাহ্ন

ভালোবেসে পাহাড়ের অর্কিড সংগ্রহ করেন ভবেশ

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২
  • ১৬ পঠিত

ফুলপ্রেমীদের কাছে অর্কিড বেশ আকর্ষণীয়। তবে প্রাকৃতিক বা বুনো অর্কিডের এখন চলছে দুঃসময়। খাগড়াছড়ি শহরের ভবেশ মিত্র চাকমা হারিয়ে যাওয়া অর্কিড সংগ্রহ করছেন নিজের প্রচেষ্টায়। বর্তমানে তাঁর সংগ্রহে আছে প্রায় ৫০ ধরনের অর্কিড।

ভবেশ মিত্র চাকমা একসময় চারুকলার শিক্ষক ছিলেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের শিখাতেন আঁকাআঁকি। তবে তাঁর প্রথম পছন্দ বাগান করা। সময় পেলেই বাড়ির একপাশে খালি জায়গায় বিভিন্ন ফলদ ও ফুলগাছ লাগান। তিনজনের সংসারে স্ত্রী কাজলা চাকমা খাগড়াছড়ি হাসপাতালের নার্স। একমাত্র সন্তান পড়াশোনা করছেন শহরের একটি বিদ্যালয়ে।

ভবেশ মিত্র চাকমার সঙ্গে কথা হয় তাঁর নারানখাইয়া পাড়ার বাড়িতে। তিনি বলেন, ছোট থেকে গাছ-গাছালির জন্য একটা ভালোবাসা আছে তাঁর। একদিন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় ওঠে আসে, পাহাড় থেকে অর্কিড হারিয়ে যাচ্ছে। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, পাহাড় থেকে অর্কিড হারিয়ে যেতে দেবেন না। যতটুকু পারেন, সংগ্রহ করবেন। এরপর তিনি তিন পার্বত্য জেলায় যেখানে অর্কিড গাছ থাকার খবর পেয়েছেন, সেখানেই গেছেন গাছ সংগ্রহ করতে।

অর্কিড সংগ্রহ করার গল্প শোনাতে গিয়ে ভবেশ মিত্র চাকমা বলেন, ‘কখনো কখনো ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গিয়ে দেখি, অর্কিড গাছটি কেটে ফেলেছে। কেউ কেউ আবার গরু-ছাগলকে খাইয়ে ফেলেছে। অনেক সময় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা না জেনে অর্কিড গাছগুলো নষ্ট করে ফেলে রাখে। এমনও হয়েছে, অর্কিড হয়তো কেটে ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু যখনই সেটা সংগ্রহ করতে চেয়েছি, টাকা দাবি করেছেন। ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় অর্কিড কেনার ঘটনাও আছে।’

অর্কিডের জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রসঙ্গে ভবেশ মিত্র চাকমা বলেন, ‘মূলত পাহাড়ের পাদদেশে বড় বড় গাছে অর্কিড প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। ছোটবেলায় দেখতাম পাড়ার বড় বড় কাঁঠাল, বট, পাকুরাসহ গাছে লাল, সাদা, হলুদসহ বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটে থাকত। একসময় পাহাড়ে অনেক বড় বড় গাছ ছিল। কিন্তু গত তিন দশক ধরে জুম চাষ, বনাঞ্চল উজারসহ পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের কারণে পাহাড় থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে অর্কিড। পাহাড়ের মানুষেরা অর্কিড সম্পর্কে সচেতন নন, পরগাছা আর আগাছা ভেবে মূল্যবান অর্কিডগুলো নষ্ট করে দেয়। অর্কিড গাছের তেমন পরিচর্যা করতে হয় না। ঘরের ভেতরে লাগানো গাছগুলোতে পানি স্প্রে করে দিতে হয়।’

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি শহরের নারানখাইয়া এলাকায় ভবেশ মিত্র চাকমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা বাড়ি আর আঙিনাজুড়ে ফুটে আছে হলুদ, সাদা, বেগুনি, গোলাপিসহ নানা রঙের অর্কিড ফুল। বাড়ির প্রবেশ পথ থেকে নিচ তলা, সিঁড়ি, বারান্দা, বাড়ির ছাদ, বাড়ির চারপাশে লাগানো নারকেল গাছ, কাঁঠাল গাছসহ সব জায়গায় ফুটে আছে পিরারেড্ডি, পরিসি, ফার্মেরি, ক্রিপিডেটাম, জেলি অর্কিডসহ নানা ধরনের অর্কিড ফুল। জানালেন, তাঁর সংগ্রহে বর্তমানে প্রায় ৫০ প্রজাতির অর্কিড আছে। স্বপ্ন দেখেন, পাহাড় থেকে হারিয়ে যাওয়া সব অর্কিড তাঁর সংগ্রহশালায় থাকবে। একদিন এ অর্কিড নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা দেখে পাহাড়ের সৌন্দর্যের ধারণা পাবে।

খাগড়াছড়ি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, ভবেশ মিত্র চাকমার অর্কিড সংগ্রহের ব্যাপারটা জানতাম না। পাহাড় থেকে হারিয়ে যাওয়া অর্কিড সংগ্রহ করা জরুরি। না হয় এগুলো হারিয়ে যাবে। বন বিভাগ থেকে আলুটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের একটা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ওখানে একটি অর্কিড এবং একটি ক্যাকটাস হাউস করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Let's check your brain + 29 = 35

একই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved 2022 CHT 360 degree