শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে সরকারের দুই প্রস্তাব

ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০২৩
  • ২২ পঠিত

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নিতে বন্ধুরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা চেয়ে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, বন্ধুরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে দুটো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রথম প্রস্তাব হলো— রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নেওয়ার খরচ বহন করা। আর দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হলো— রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে আরও নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম’ বিষয়ক সভায় এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। যেখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন, মানবিক কার্যক্রম বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

ব্রিফিংয়ের আগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ১৭ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত প্রমুখ।

প্রথম প্রস্তাব প্রসঙ্গে মুখ্য সচিব বলেন, সরকার ভাসানচরে ১ লাখ লোকের বসবাসের জন্য আবাসন তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে সেখানে ৩০ হাজার নেওয়া হয়েছে। আরও ৭০ হাজার লোক সেখানে নিতে চাই। এই স্থানান্তর ব্যয়বহুল বিষয়। আমরা আশা করছি যে, বন্ধুরাষ্ট্র যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করে, তারা এই লোকদেরকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নেওয়ার খরচ বহন করবে। প্রধানমন্ত্রী এটি সিরিয়াসলি চাইছেন।

দ্বিতীয় প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভাসানচরে যে জমি আছে তার তিনভাগের একভাগ আমরা ব্যবহার করেছি। বাকি দুই ভাগ জায়গাতেও প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন অবকাঠামো নির্মিত হোক এবং আরও রোহিঙ্গাদের সেখানে নেওয়া হোক।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সেখানে নতুন অবকাঠামো নির্মাণে (বিদেশি বন্ধুদের কাছে) সহায়তা চেয়েছে”।

তিনি জানান, বৈঠকে বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে গুরুত্ব দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অত্যধিক ঘনবসতি ও তাদের মানবেতর জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে অবস্থানের কারণে সেখানে বেশকিছু সামাজিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটে, নিজেদের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, অপহরণ ঘটেছে, পাচার ঘটেছে, নিজেদের বিরোধের কারণে জিম্মি করার ঘটনা ঘটছে। এর একটা সামাজিক কুফল আছে। অনেকে বিভিন্ন ধরনের মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, এসব কারণে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলেছি যে, যত দ্রুততম সময়ে আমরা যত বেশি লোককে ভাসানচরে নিয়ে যাবো ততোই তাদের নিরাপত্তা বাড়বে, তেমনি তাদের সন্তানদের বেড়ে ওঠা ভালো হবে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনসহ কৃষি কাজের সুযোগ ও অধিকতর ভালো পরিবেশ ও জীবনযাপনের সুযোগের কথা জানান মুখ্য সচিব। এছাড়াও ভাসানচরে নেওয়া রোহিঙ্গারা কিছুদিন পর পর কক্সবাজারে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রত্যাশা অনুযায়ী সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে মানবিক সহায়তা পাচ্ছি। ২০২২ সালে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানবিক কাজ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর কাছে আমাদের দিক থেকে চাওয়া ছিল ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু তার ৬২ শতাংশ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা যে বৈদেশিক সহায়তা চাই সেটা আমরা পাইনি। আমরা এ সহায়তা আরও বাড়াতে বলেছি।

তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, শুধু ভাসানচরকে তৈরি করার জন্য সরকার প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদী অবস্থানের ফলে পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আমরা জানিয়েছি যে, এই রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থানের ফলে বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হচ্ছে, একই সাথে আমাদের প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, উখিয়াতে যেখানে এখন রোহিঙ্গারা আছে সেখানে ৮ হাজার একর বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৭ দশমিক ৫ একর সামাজিক বনায়ন ধ্বংস হয়েছে, প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়েছে ৪ হাজার ১৩৬ একরের বেশি। এছাড়া অন্যান্য বন, সবুজ এলাকাসহ প্রায় ৮ হাজার একরের বেশি আমাদের বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি অপূরণীয় একটা ক্ষতি।

অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার, কানাডিয়ান হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস, ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসডুপুয়, জার্মান রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রস্টার, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে, ইউএন রাষ্ট্রদূত গুইন লুইস, ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডার ক্লাউ, ডব্লিউএফপি আবাসিক প্রতিনিধি ডম স্কালপেলি, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স সুজান মুলার, জাপানি মিশনের উপপ্রধান মাচিদা তাতসুয়া, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের উপপ্রধান থিজ ওয়াউডস্ট্রা, তুর্কি দূতাবাসের ডেপুটি চিফ বাতুহান গুরহান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতার প্রধান এবং হোস্ট কমিউনিটিস প্রোগ্রাম অব কানাডিয়ান হাইকমিশন বিবেক প্রকাশ এবং মার্কিন দূতাবাসের আঞ্চলিক উদ্বাস্তু সমন্বয়কারী ম্যাকেঞ্জি রোও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Let's check your brain − 1 = 7

একই ধরনের আরও সংবাদ
© All rights reserved 2022 CHT 360 degree